কুকুর: মানুষের অন্যতম বিশ্বস্ত সাথী
কুকুর (Canis familiaris বা Canis lupus familiaris) হলো নেকড়ের গৃহপালিত বংশধর। প্রায় ১৫,০০০ বছর আগে শিকারীদের সাথে নেকড়ের সম্পর্কের মাধ্যমে এরা গৃহপালিত হয়। তবে কিছু মতে, কুকুর মানুষের বশে আসে প্রায় ১০০,০০০ বছর আগে। অন্যান্য তথ্যসূত্র অনুযায়ী, এই সময়কাল আরও সাম্প্রতিক। গৃহপালিতকরণের পরে কুকুরের অসংখ্য জাত (breed) তৈরি হয়েছে, যার মধ্যে কয়েক ইঞ্চি উঁচু চিহুয়াহুয়া থেকে শুরু করে তিন ফুট উঁচু আইরিশ উলফহাউন্ড পর্যন্ত বিভিন্ন আকারের কুকুর রয়েছে।
কুকুরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা:
মানুষের সাথে কুকুরের দীর্ঘ সম্পর্কের ফলে, এরা বিভিন্ন কাজে মানুষকে সাহায্য করে। শিকার, পশুপালন, ভার বহন, রক্ষা, সাথী হিসেবে কাজ করা, থেরাপি, প্রতিবন্ধীদের সাহায্য করা, পুলিশ ও সেনাবাহিনীতে সহায়তা প্রভৃতি কাজে কুকুর ব্যবহৃত হয়। বিশ্বব্যাপী কুকুরের সংখ্যা ৭০০ মিলিয়ন থেকে ১ বিলিয়নের মধ্যে বলে অনুমান করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে, ৩৪-৪০% পরিবারের কুকুর রয়েছে।
বৈশিষ্ট্য:
কুকুরের শারীরিক বৈশিষ্ট্য জাত অনুযায়ী বেশ ভিন্ন। তবে সব কুকুরের (লেজ বাদে) একই সংখ্যক হাড়, শক্তিশালী চোয়াল এবং ৪২টি দাঁত থাকে। কুকুরের ঘ্রাণশক্তি, শ্রবণশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তি মানুষের তুলনায় বেশ ভিন্ন।
ঐতিহাসিক তথ্য:
বন-ওবারকাসেল, জার্মানিতে খুঁজে পাওয়া কুকুরের অবশেষ প্রায় ১৪,২২৩ বছর পুরোনো, যা গৃহপালিত কুকুরের সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে ধরা হয়। জিনগত গবেষণা অনুযায়ী, কুকুর ২৭,০০০ থেকে ৪০,০০০ বছর আগে নেকড়ে থেকে বিভিন্ন হয়।
বুনো কুকুর:
বুনো কুকুর (Cuon alpinus) Canidae গোত্রের একটি মাংসাশী স্তন্যপায়ী। এরা লালচে রঙের এবং সামাজিক প্রাণী হিসেবে দলবদ্ধ হয়ে চলাফেরা করে। বাংলাদেশে বুনো কুকুর চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকায় ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে বাস করে। এটি এখন অতি বিপন্ন প্রজাতি।
স্বাস্থ্য ও রোগ:
কুকুর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে, যেমন রেবিজ, প্যারাসাইট সংক্রমণ, বিভিন্ন সংক্রামক রোগ ও অনেক। কুকুরের জীবনকাল জাত অনুযায়ী ভিন্ন, তবে গড়ে ১২.৭ বছর।
উপসংহার:
কুকুর মানুষের জীবনে এক অপরিহার্য অংশ। এদের বিশ্বস্ততা, বুদ্ধিমত্তা ও বিভিন্ন কাজে সহায়তার জন্য আমরা এদের কৃতজ্ঞ থাকতে পারি। তবে কুকুরের স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষার প্রতি সচেতন থাকা আমাদের কর্তব্য।