শিং মাছ (Heteropneustes fossilis) বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর মিঠাপানির মাছ। এটি Siluriformes বর্গের এবং Heteropneustidae পরিবারের অন্তর্গত। এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা ইত্যাদিতে এটি পাওয়া যায়। শিং মাছের দেহ লম্বা, সামনের দিক নলাকার এবং পিছনের দিক দু'পাশে চাপা। এদের মাথা চ্যাপ্টা, ছোট ও পাতলা চামড়া দিয়ে ঢাকা। মুখে ৮টি লম্বা শুঁড় এবং মাথার দু'পাশে দুটি বিষাক্ত কাঁটা থাকে। পূর্ণবয়স্ক শিং মাছের গায়ের রং বাদামী বা কালো হয়, তবে ছোট বয়সে লালচে থাকে।
শিং মাছের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এর দীর্ঘ নলাকার বায়ুথলি, যা ফুসফুসের ন্যায় কাজ করে। এই বায়ুথলির সাহায্যে এরা পানির বাইরেও কিছুক্ষণ জীবিত থাকতে পারে। এদের পৃষ্ঠপাখনা ছোট এবং কাঁটাবিহীন। বক্ষপাখনা বিষগ্রন্থিযুক্ত। পায়ুপাখনা লম্বা এবং পুচ্ছপাখনা গোলাকার।
শিং মাছ প্রধানত আমিষজাতীয় খাদ্য গ্রহণ করে। ছোট বয়সে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন ও জুপ্ল্যাঙ্কটন, বড় হলে পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ, জলজ উদ্ভিদ, এবং কাদা-বালি খায়। পুকুরের তলার জৈব পদার্থও এরা খায়। এরা বর্ষাকালে প্রজনন করে এবং একবারে অনেক ডিম পাড়ে।
শিং মাছের পুষ্টিগুণ অতুলনীয়। এতে প্রোটিন, চর্বি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন প্রভৃতি উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকে। এই মাছ রোগী ও রক্তশূন্যতায় পীড়িতদের জন্য পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বর্তমানে, প্রাকৃতিক আবাসস্থলের ধ্বংসের কারণে শিং মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বাণিজ্যিক উৎপাদন বৃদ্ধি এবং এই মাছের সংরক্ষণের জন্য কৃত্রিম প্রজনন ও জিনগত গবেষণার মাধ্যমে উন্নত চাষ পদ্ধতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। আমরা আপনাকে এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য দিয়ে আপডেট করব যখন আরও তথ্য পাওয়া যাবে।