সিলেটের শাহী ঈদগাহ ময়দান: ঐতিহাসিক গौरবের সাক্ষী
সিলেট শহরের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত শাহী ঈদগাহ ময়দান বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান। মোগল আমলে, ১৭শ শতাব্দীতে, সিলেটের ফৌজদার ফরহাদ খাঁ এর তত্ত্বাবধানে এটি নির্মিত হয়। এটি কেবলমাত্র ঈদের নামাজের জন্যই ব্যবহৃত হয় না, বরং ইতিহাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী হিসেবেও দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ মুসল্লি একসাথে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন।
ঐতিহাসিক ঘটনা:
- ১৭৮২ সালের ১০ই মুহাররম (১৬ ডিসেম্বর): সৈয়দ মুহাম্মদ হাদী ও সৈয়দ মুহাম্মদ মেহেদী নেতৃত্বাধীন ইংরেজ বিরোধী প্রথম অভ্যুত্থানের সূচনা হয় এই ঈদগাহ মাঠে। এই ঘটনাকে '১৭৮২ সালের সিলেট অভ্যুত্থান' হিসেবে স্মরণ করা হয়।
- বহু ঐতিহাসিক নেতার সভা-সমাবেশের আয়োজন: মহাত্মা গান্ধী, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মওলানা মুহাম্মদ আলী জওহর, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং এ. কে. ফজলুল হক-এর মতো নেতারা স্বাধীনতা আন্দোলন এবং রাজনৈতিক সমাবেশের জন্য এই ঈদগাহ মাঠ ব্যবহার করেছিলেন।
স্থাপত্য ও বৈশিষ্ট্য:
শাহী ঈদগাহ ময়দান একটি উঁচু টিলায় অবস্থিত। এর প্রবেশদ্বার তিনটি। মোট ১৫টি গম্বুজ এবং অনেক ছোট-বড় মিনার রয়েছে। মুসল্লীদের অজু করার জন্য মাঠের সামনে একটি বড় পুকুর রয়েছে, যা স্থানীয়ভাবে 'ফুকোর' বা 'ফুকরি' নামে পরিচিত। প্রাচীরের মাঝখানে একটি বৃহৎ মিহরাব এবং অন্যান্য ছোট মিহরাব রয়েছে।
ভৌগোলিক অবস্থান:
শাহী ঈদগাহ ময়দান সিলেট শহরের কেন্দ্র থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৭ কিলোমিটার এবং সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে এটি অবস্থিত।
গুরুত্ব:
শাহী ঈদগাহ ময়দান কেবলমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি সিলেটের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এই স্থানটি সিলেটের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং রাজনীতির সাথে জড়িত। এটি স্থানীয়দের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়।