শামসুদ্দিন টগর

আপডেট: ৪ জানুয়ারী ২০২৫, ৩:৪৩ এএম

শামসুদ্দিন টগর: বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের এক অমূল্য সম্পদ

শামসুদ্দিন টগর (১৭ ডিসেম্বর, ১৯৪৪ – ২৩ জুলাই, ২০১২) ছিলেন একজন প্রতিভাবান বাংলাদেশী চলচ্চিত্র পরিচালক এবং অভিনেতা। তিনি ১৯৪৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর খুলনা জেলার ডুমরিয়া থানার টুরনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মিয়া মতিন ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মাতা নাসুদা খাতুন। ১৩ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার বড় ছিলেন। তার দুই ছোট ভাইও অভিনয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন; একজন মঞ্চ অভিনেতা মহিউদ্দিন লালু এবং অন্যজন টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেতা কামালউদ্দিন নিলু। এফডিসি’র কর্মকর্তা ও চিত্রপরিচালক প্রয়াত আবদুল মতিন ছিলেন তার শ্বশুর।

বাবার চাকরির সুবাদে শামসুদ্দিন টগর বিভিন্ন জেলায় পড়াশোনা করেন। তিনি ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে মেট্রিক এবং ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন। কলেজ জীবনে তিনি ‘মিনার্ভা’ নামক এক নাট্যদলে যুক্ত ছিলেন এবং ফরিদপুরের বিভিন্ন মঞ্চে নাটকে অভিনয় করতেন।

ব্যক্তিগত জীবনে, ১৯৭১ সালে তিনি একজন নাট্যশিল্পী রেবা শামসুদ্দিনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তান ছিল। কন্যার নাম বেথুন শামসুদ্দিন এবং জামাতা মিনা মাসুদ উজ্জামান একজন উপ-সচিব ছিলেন। পুত্রদের নাম নাসিরউদ্দিন কমল এবং জালালউদ্দিন মিথুন।

শামসুদ্দিন টগর একজন দক্ষ চিত্রপরিচালক ছিলেন। তরুণ বয়সে তিনি কিছু চলচ্চিত্রে খলনায়ক ও সহ-নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। পরবর্তীতে তিনি নিয়মিত চলচ্চিত্র এবং নাটকে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত কিছু উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো: সংগ্রাম, দস্যু বনহুর, এপার ওপার, গোপন কথা, দম মারো দম, মাসুদ রানা, জজ সাহেব, স্বপ্নের বাসর, স্বপ্ন পূরণ, জীবনের চেয়ে দামী, মেঘের কোলে রোদ, বিন্দুর ছেলে, ভালোবাসার লাল গোলাপ, হুমকীর মুখে, সুন্দরী বধূ, মা-বাবার স্বপ্ন, ভালোবাসার শেষ নাই, তুই যদি আমার হইতি, সমাজের শত্রু, মায়ের জন্য মরতে পারি ইত্যাদি।

১৯৬৬ সালে নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘কার বউ’ ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে তার চলচ্চিত্র জীবনের সূচনা ঘটে। পরে তিনি সুভাষ দত্তের সাথেও কাজ করেন।

১৯৭৬ সালে ‘সারথী’ ছদ্মনামে তিনি ‘দস্যু বনহুর’ চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন, যা পারভেজ ফিল্মসের ব্যানারে সোহেল রানা প্রযোজনা করেন। এই ছবির মাধ্যমে অঞ্জনার রুপালি পর্দায় অভিষেক হয়। তার পরিচালিত অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে: বানজারান, মহেশখালীর বাঁকে, আখেরী নিশান, হুর-এ আরব, গলি থেকে রাজপথ, দখল, সম্রাট, রাজ ভিখারী, নকল শাহজাদা, নূরী, মহুয়া সুন্দরী, হুমকী, রতনমালা, সতী কমলা, যুবরাজ, জজ সাহেব, চেনাজানা শত্রু ইত্যাদি। ‘আখেরী নিশান’ ও ‘বানজারান’ চলচ্চিত্র বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে সংরক্ষণের জন্য নির্বাচিত হয়েছে।

২০১২ সালের ২৩ জুলাই ৬৮ বছর বয়সে শামসুদ্দিন টগর মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একজন স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯৪৪ সালে খুলনায় জন্মগ্রহণ
  • ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে বি.এ পাশ
  • ১৯৭৬ সালে 'দস্যু বনহুর' চলচ্চিত্র পরিচালনায় অভিষেক
  • অনেক জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালনা
  • ২০১২ সালে মৃত্যুবরণ

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - শামসুদ্দিন টগর

শামসুদ্দিন টগর ‘দস্যু বনহুর’ চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন।