লস অ্যাঞ্জেলেস, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের দক্ষিণে অবস্থিত একটি বৃহৎ নগরী। প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত এই শহরটি এর বিশাল আয়তন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মৃদু জলবায়ু, জাতিগত বৈচিত্র্যপূর্ণ জনসংখ্যা, হলিউডের চলচ্চিত্র শিল্প ও বিনোদন শিল্প, এবং শক্তিশালী অর্থনীতির জন্য বিখ্যাত। এল.এ. নামেও পরিচিত এই মহানগরীটি ক্যালিফোর্নিয়ার বৃহত্তম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম (নিউ ইয়র্ক শহরের পরে) এবং উত্তর আমেরিকার তৃতীয় বৃহত্তম শহর।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ইতিহাস প্রাচীনকালে টংভা ও চুমাশ আদিবাসীদের বসতি স্থাপনের সাথে শুরু হয়। ১৫৪২ সালে স্পেনিয়াশ ঔপনিবেশিক হুয়ান রোদ্রিগেজ কাব্রিল্লো এলাকাটি দখল করেন। ১৭৮১ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর স্পেনীয় শাসনামলে “এল পুয়েবলো দে নুয়েস্ত্রা রেইনা দে লোস আনহেলেস দেল রিও দে পোরসিউনকুলা” (পোরসিউনকুলা নদীর দেবদূতদের রাণী কুমারী মেরির শহর) নামে একটি ছোট্ট বসতি স্থাপিত হয়, যা পরে লস অ্যাঞ্জেলেস নামে পরিচিত হয়। ১৮২১ সালে মেক্সিকোর স্বাধীনতা লাভের পর শহরটি মেক্সিকোর অংশ হয়। ১৮৪৮ সালে মেক্সিকো-আমেরিকার যুদ্ধের পর গুয়াদালুপে ইদালগো চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লস অ্যাঞ্জেলেসসহ সমগ্র ক্যালিফোর্নিয়া অর্জন করে।
১৯শ শতকের শেষভাগে তেল আবিষ্কার এবং ১৯১৩ সালে পানি সরবরাহের উন্নত ব্যবস্থা লস অ্যাঞ্জেলেসের দ্রুত বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিংশ শতাব্দীতে চলচ্চিত্র শিল্পের কেন্দ্র হিসেবে হলিউডের বিকাশ এবং বিভিন্ন শিল্পের বৃদ্ধি শহরটির অর্থনৈতিক উন্নতিতে অবদান রাখে। ১৯৩২ এবং ১৯৮৪ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক এবং ১৯৯৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজন লস অ্যাঞ্জেলেসের বিশ্বব্যাপী খ্যাতি বৃদ্ধি করে।
ভৌগোলিকভাবে লস অ্যাঞ্জেলেস প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে একটি সমতল ভূমিতে অবস্থিত, পূর্বে সান গেব্রিয়েল পর্বতমালা এবং পশ্চিমে সান্টা মনিকা পর্বতমালা রয়েছে। শহরটি বহুজাতিক ও বহুসাংস্কৃতিক, মেক্সিকান, কোরিয়ান, সালভাদোরীয় এবং গুয়াতেমালীয় প্রবাসীদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৪০ লক্ষ, এবং লস অ্যাঞ্জেলেস মহানগর এলাকায় ১ কোটি ৩০ লক্ষের বেশি মানুষ বাস করে। লস অ্যাঞ্জেলেস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প, বাণিজ্য এবং অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, এবং বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতির অধিকারী।