রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট (ইংরেজি: Romeo and Juliet) হচ্ছে বিখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম শেক্সপিয়র রচিত একটি বিয়োগান্তক নাটক। এটি দুজন প্রেমিক-প্রেমিকাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে, যাদের মৃত্যুর ফলে দুই বিবাদমান পরিবার একত্রিত হয়। শেক্সপিয়রের জীবদ্দশায় এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় নাটক ছিল, হ্যামলেট ও ম্যাকবেথের সাথে সমান জনপ্রিয়তা ছিল।
প্রাচীন যুগের বিয়োগান্তক প্রেমের উপাখ্যানের ধারাবাহিকতায় রোমিও জুলিয়েট নাটকের অবস্থান। মূল কাহিনী ইতালির একটি প্রচলিত গল্প থেকে নেওয়া। আর্থার ব্রুক ১৫৬২ সালে 'দ্য ট্রাজিকাল হিস্ট্রি অফ রোমিয়াস এণ্ড জুলিয়েট' বইতে, আর উইলিয়াম পেণ্টার ১৫৬৭ সালে 'প্যালেস অফ প্লেজার' বইতে এটি গদ্য ও পদ্যে প্রকাশ করেন। শেক্সপিয়ার, আনুমানিক ষোড়শ শতাব্দীর ৯০-এর দশকে এটি রচনা করেন এবং মার্কুশিও, প্যারিস প্রমুখ পার্শ্বচরিত্র যোগ করেন। প্রথম কোয়ার্টো সংস্করণ ১৫৯৭ সালে প্রকাশিত হয়, যার গুণগত মান খুবই ন্যূন ছিল; পরবর্তী সংশোধিত সংস্করণগুলি শেক্সপিয়ারের মূল রচনার সাথে বেশি মিল রাখে।
নাটকটি ইতালির ভেরোনা শহরে অবস্থিত। মন্টেগু এবং ক্যাপুলেট পরিবারের জন্মগত শত্রুতা থেকেই নাটকের গল্প শুরু। রাজকুমার এসকলাসের হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও তাদের দ্বন্দ্ব চলতেই থাকে। কাউন্ট প্যারিস জুলিয়েটের সাথে বিবাহের প্রস্তাব দেন, কিন্তু ক্যাপুলেট দু'বছর অপেক্ষা করতে বলেন। মন্টেগু পরিবারের রোমিও ক্যাপুলেট পরিবারের রোজালিনকে ভালোবাসেন; বন্ধুদের সাথে ছদ্মবেশে ক্যাপুলেটের নাচের আসরে যান এবং জুলিয়েটের প্রেমে পড়েন। প্রথম সাক্ষাতেই তাদের মধ্যে গভীর আকর্ষণের সৃষ্টি হয়। টিবাল্ট, জুলিয়েটের ভাই, রোমিওকে হত্যা করার চেষ্টা করলেও তার পিতা তাকে বাধা দেন। রাতে রোমিও ক্যাপুলেটের বাগানে ঢুকে জুলিয়েটের প্রেম নিবেদন শোনেন, এবং তারা গোপনে বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নেন। সন্ন্যাসী লরেন্স, দুই পরিবারের মিলন কামনা করে, তাদের বিয়ে দেন।
টিবাল্টের ক্রোধ শান্ত না হওয়ায় রোমিওর সাথে দ্বন্দ্বযুদ্ধে লিপ্ত হয়। মার্কুশিও নিহত হলে রোমিও টিবাল্টকে হত্যা করে। বিচারে রোমিওকে নির্বাসিত করা হয়। জুলিয়েটের পিতা তাকে প্যারিসের সাথে বিয়ে দিতে চাইলে অসহায় জুলিয়েট সন্ন্যাসী লরেন্সের কাছে সাহায্য চান। লরেন্স জুলিয়েটকে একটি পুষ্পনির্যাস দেয়, যা পান করলে ৪২ ঘণ্টার জন্য মৃতের মতো অবস্থা হবে। তিনি রোমিওকে খবর পাঠাবেন। কিন্তু বার্তা পৌঁছায় না, বালথাজার জুলিয়েটের মৃত্যুর খবর রোমিওকে দেয়। দুঃখে রোমিও বিষ পান করে, আর জুলিয়েট জ্ঞান ফিরে রোমিওকে মৃত দেখে তার ছুরি দিয়ে আত্মহত্যা করে। শেষ দৃশ্যে দুই পরিবার ও রাজা সমাধিগৃহে মিলিত হন, এবং সন্তানদের মৃত্যুতে তাদের দীর্ঘদিনের শত্রুতার অবসান ঘটে।
নাটকটি বিভিন্ন রূপে অভিযোজিত হয়েছে: রঙ্গমঞ্চ, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, যাত্রা ইত্যাদি। সপ্তদশ-ঊনবিংশ শতকে অনেক পরিমার্জন ও পরিবর্তন হয়েছে, তবে বিংশ ও একবিংশ শতকে মূল রচনার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতা (জর্জ কুকার, ফ্রাংকো জেফিরেলি, বাজ লুরমান, ব্রডওয়ে কোম্পানি) বিভিন্ন সময়ে রোমিও ও জুলিয়েটের চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন।