তাসলিমা বেগম রেনু: ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনির শিকার
২০১৯ সালের ২০ জুলাই, ঢাকার উত্তর বাড্ডার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে তাসলিমা বেগম রেনু নামে এক নারীকে ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ৪০ বছর বয়সী রেনু তার মেয়েকে ওই স্কুলে ভর্তি করার জন্য খোঁজখবর নিতে গেলে এই ঘটনা ঘটে। দেশে ছেলেধরার গুজবের প্রাদুর্ভাবের সময় এই ঘটনা ঘটে যা দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল।
ঘটনার বর্ণনা: রেনুকে ৫০০ জনেরও বেশি মানুষের একটি ভিড় পিটিয়ে মারধর করে। এই ঘটনা মোবাইল ফোন ও সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, একদল লোক তাকে নির্মমভাবে মারধর করছে, অন্যরা দর্শক হিসাবে উপস্থিত ছিল।
মামলা ও বিচার: ঘটনার পর, রেনুর ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু অজ্ঞাতনামা ৪০০-৫০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্তে ১৩ জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং ২ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিকে শনাক্ত করা হয়। ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল হক ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই আসামির বিরুদ্ধে দোষীপত্র দাখিল করেন। ২০২১ সালের ১ এপ্রিল ১৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরবর্তীতে আদালত ইব্রাহিম ওরফে হৃদয় মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড এবং রিয়া বেগম ময়না, আবুল কালাম আজাদ, কামাল হোসেন ও আসাদুল ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। অন্য আসামিদের খালাস দেওয়া হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই আসামির বিচার ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অনুষ্ঠিত হয়।
রেনুর ব্যক্তিগত জীবন: রেনু লেখাপড়া শেষ করে আড়ং ও ব্র্যাকে চাকরি করেছেন এবং শিক্ষকতাও করেছেন। ২০১৭ সালে তার স্বামীর সাথে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তার দুই সন্তান ছিল; বড় ছেলে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়ত এবং ছোট মেয়ে মহাখালীর শিশুমেলা স্কুলে পড়ত। রেনুর বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ছিল।
তাসলিমা বেগম রেনুর মর্মান্তিক মৃত্যু ছাত্রীদের নিরাপত্তা ও গুজবের প্রভাব সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে এবং সমাজে ছেলেধরা সংক্রান্ত গুজবের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।