রূপসা নদীর তীরবর্তী এলাকা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। খুলনা শহরের একটি অংশ রূপসা নদীর তীরে অবস্থিত। নদীটির তীরে অবস্থিত বিভিন্ন স্থাপনা ও ঘটনার কারণে এটি ঐতিহাসিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে উল্লেখযোগ্য।
ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য: রূপসা নদী পদ্মার একটি শাখা নদী, যা ভৈরব নদ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। নদীটির দৈর্ঘ্য ৯ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৪৮৬ মিটার, এবং সর্পিলাকার প্রকৃতির। এটি বর্ষার সময় বন্যার প্রভাবিত হয়, এবং জোয়ার-ভাটার প্রভাবেও প্রভাবিত। বঙ্গোপসাগরের সাথে যুক্ত রূপসা-পশুর নদী ব্যবস্থার অংশ হিসেবে রূপসা নদী সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব: ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে নড়াইল জেলার রূপচাঁদ সাহা নামক লবণ ব্যবসায়ী নৌকায় যাতায়াতের সুবিধার্থে ভৈরব নদ ও কাজীবাছা নদীর সংযোগস্থলে একটি খাল খনন করেছিলেন। ঐ খালের নাম অনুসারেই নদীটির নামকরণ হয়। রূপসা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের ইতিহাসে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা, স্বাধীনতা সংগ্রাম, আন্দোলন ও সংঘর্ষের সাক্ষী রয়েছে। তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ নামক চলচ্চিত্রে রূপসা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের এক বামপন্থী নেতার জীবনী ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলী তুলে ধরা হয়েছে।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব: রূপসা নদী খুলনা অঞ্চলের বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এখানে লাইটার জাহাজ চলাচল করে। রূপসার তীরে বানৌজা তিতুমীর ও খুলনা শিপইয়ার্ড অবস্থিত। রাজাপুর সল্ট রিফাইনারি লিমিটেড ও অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান এ নদীর তীরে অবস্থিত।
প্রশাসনিক বিভাগ: রূপসা নদীর তীরবর্তী এলাকা বিভিন্ন ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় বিভক্ত। পাউবো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৮১ হিসেবে রূপসা নদীকে চিহ্নিত করে।
সংস্কৃতি: রূপসা নদী স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে গভীরভাবে জড়িত। কবি জীবনানন্দ দাশ তার কবিতায় রূপসা নদীর সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন। রূপসা নদীর তীরের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় ঐতিহ্য ও জীবনযাত্রার প্রতিফলন দেখা যায়।
অন্যান্য: রূপসা নদী বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রথম শ্রেণির নৌপথ হিসেবে স্বীকৃত। নদীতে বছরজুড়ে পানিপ্রবাহ থাকে এবং ছোট বড় নৌযান চলাচল করে।