রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান: তুরস্কের এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ান (তুর্কি: Recep Tayyip Erdoğan; জন্ম: ২৬শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪) তুরস্কের বর্তমান এবং ১২তম রাষ্ট্রপতি। ২০১৪ সাল থেকে তিনি এই দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০০১ সালে জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) প্রতিষ্ঠা করেন এবং দীর্ঘদিন ধরে দলটির সভাপতি ও প্রধান দলনেতা ছিলেন। একেপি ১৯৮৪ সালের পর প্রথমবার তুরস্কের ইতিহাসে একক দল হিসেবে এবং পরপর চারবার সংসদীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয় (২০০২, ২০০৭, ২০১১, ২০১৪)। রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে ২০০৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং এর আগে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ইস্তাম্বুলের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
তার রাজনৈতিক জীবন:
১৯৭৬ সালে তিনি কমিউনিস্ট বিরোধী অ্যাকশন গ্রুপ ন্যাশনাল তুর্কি স্টুডেন্ট ইউনিয়নে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে জড়িত হন। পরে তিনি ইসলামিস্ট ন্যাশনাল স্যালভেশন পার্টি (এমএসপি) -তেও যোগ দেন। ১৯৮০ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি বেসরকারী খাতে কাজ করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন। ১৯৯৭ সালে একটি জাতীয়তাবাদী কবিতা পাঠ করার অভিযোগে তিনি দশ মাসের কারাদণ্ড পান এবং মেয়র পদ থেকে অপসারিত হন। ১৯৯৯ সালে কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর তিনি আবার রাজনীতিতে ফিরে আসেন এবং ২০০১ সালে একেপি প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হিসেবে কাজ:
২০০২ সালে একেপি বিজয়ী হওয়ার পর ২০০৩ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ২০০৭, ২০১১ এবং ২০১৪ সালে আবার নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকেন। ২০১৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং ২০২৩ সালে পুনরায় নির্বাচিত হয়ে তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতায় আসেন।
উল্লেখযোগ্য কাজ:
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বাণিজ্যিক প্রবেশাধিকারের চুক্তি, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, তুর্কি লিরার মূল্য পুনর্নিধারণ, সুদের হার কমানো, উসমানীয় শাসনাধীন দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন, বিরোধী বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণ, ইস্তাম্বুলের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রভৃতি কাজের জন্য তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিত।
বিতর্ক ও সমালোচনা:
তার ক্ষমতার অপব্যবহার, গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ, অর্থনৈতিক মন্দা, এবং স্বৈরশাসনের দিকে ঝুঁকির জন্য তিনি সমালোচিত হন।
ব্যক্তিগত জীবন:
তিনি ১৯৫৪ সালে ইস্তাম্বুলের কাসিমপাশা শহরতলীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আহমদ এরদোয়ান একজন জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিলেন। তিনি ১৯৭৮ সালে এমিন গুলবারানকে বিয়ে করেন। তাদের চার সন্তান রয়েছে।