রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি বিশ্লেষণ
ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন। তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাজনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা ও লেখনীর মাধ্যমে অবদান রেখে আসছেন। তার লেখা ও বক্তৃতাগুলিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ঘাটতি, গোষ্ঠীস্বার্থ, এবং ভূরাজনীতির প্রভাব প্রভৃতি বিষয় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে।
তিতুমীর স্যরের মতে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন মডেলের মৌলিক দুর্বলতা রয়েছে। বিনিয়োগের অভাব, প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক বন্দোবস্তের অভাব উন্নয়নে বড় বাধা হিসেবে কাজ করে। তিনি রাজনীতি ও অর্থনীতিকে আলাদা করে দেখার সম্ভাবনা নাকচ করে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নির্দেশকগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। শ্রীলঙ্কার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি রাজনৈতিক বন্দোবস্তের অভাবে অর্থনৈতিক সংকটের বিপর্যয়ের দিকে ইঙ্গিত করেন।
তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে জ্বালানি নিরাপত্তা, ঋণ সংস্কৃতি, অর্থনীতির বহুমুখীকরণের অভাব এবং দেশি-বিদেশি ঋণের বৃদ্ধি তুলে ধরেন। গোষ্ঠীতন্ত্রকে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক পরিবেশের পরিবর্তন ছাড়া এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।
তিতুমীর স্যর, বর্তমান উন্নয়ন নীতির ফল ক্ষমতাকেন্দ্রের কাছেই সীমাবদ্ধ থাকার কথা উল্লেখ করেন। জিডিপি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি আয়বৈষম্য বৃদ্ধির দিকেও তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কোভিড মহামারী থেকে পাঠ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে, তিনি সর্বজনীন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর জোর দেন।
তিনি উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশে স্বাধীনতার পরের বাজেটের সাথে বর্তমান বাজেটের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। নীতিকেন্দ্রিক বৈষম্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ক্ষমতার কেন্দ্রীভবনের ফলে অর্থনৈতিক অগ্রগতি বিপরীতমুখী হয়েছে। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলাতন্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত ক্ষমতার ত্রিভুজ থেকে বেরিয়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরির সম্ভাবনার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশের গুরুত্ব বৃদ্ধি এবং এর ফলে তৈরি চাপ মোকাবেলায় তিনি প্রতিবেশীদের সাথে সহযোগিতা, পরাশক্তির দ্বন্দ্বে নিরপেক্ষতা, এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অবস্থান নেওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন। ব্রিকসে যোগদানের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তিনি উৎপাদন বহুমুখীকরণ এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
সাম্প্রতিক নির্বাচনী পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে, তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তরের অভাব এবং অর্থনৈতিক নীতির জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। রাজনৈতিক বন্দোবস্তে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমেই উত্তরণ সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃত্ব এবং বঙ্গোপসাগর
ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের নেতৃত্বের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি মনে করেন, ২০২৫ সালে হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগরে দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্রবিন্দু স্থানান্তরিত হবে। এই পরিবর্তনের সুযোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ও ভূরাজনৈতিক নেতৃত্ব দান করতে পারে। তিনি সরকারের কাছে এমন পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন যাতে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃত্ব দিতে পারে। সংস্কার ও নির্বাচনের বদলে ন্যূনতম ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথাও তিনি তুলে ধরেছেন। অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টির উপর জোর দিয়ে তিনি বলেছেন যে, সামগ্রিক সংস্কারের পরিবর্তে চার থেকে পাঁচটি দৃষ্টান্ত তৈরি করা উচিত। সম্প্রতি অনুমোদিত ব্যাংকগুলোর স্পনসরের উৎস খুঁজে বের করার দায়িত্ব এনবিআরের বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।