রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলা: ঐতিহ্য, স্থাপত্য ও সংস্কৃতির সমন্বয়
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলা ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। প্রাচীন পুন্ড্রবর্ধন জনপদের অংশ হিসেবে হাজার বছরের ঐতিহ্য বহন করে আসছে এই উপজেলা। ১৯২.৬৪ বর্গকিলোমিটার (৭৪.৩৮ বর্গমাইল) আয়তনের এ উপজেলা রাজশাহী শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার এবং নাটোর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
ঐতিহাসিক পুঠিয়া রাজবংশ:
পুঠিয়া রাজবংশের সূত্রপাত হয় মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে (১৫৫৬-১৬০৫)। বৎসাচার্য নামে এক ঋষিপুরুষ মোগল সুবেদার মানসিংহের সাহায্য করার জন্য পুঠিয়া এলাকার জমিদারী লাভ করেন। এরপর বংশধরদের শাসনামলে পুঠিয়া বিখ্যাত জমিদারি রাজ্যে পরিণত হয়। নীলাম্বর রায় জাহাঙ্গীর থেকে ‘রাজা’ উপাধি লাভ করেন। পরবর্তীতে জমিদারি ভাগাভাগি হলে পাঁচআনি ও চারআনি এস্টেট তৈরি হয়। ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলেও, পুঠিয়ার রাজবংশের ঐতিহ্য আজও বহমান।
স্থাপত্যের অপরূপ নিদর্শন:
পুঠিয়া রাজবংশের শাসনামলে, প্রশাসনিক ও ধর্মীয় কার্যক্রমের জন্য অসংখ্য স্থাপত্য নির্মিত হয়। পুঠিয়া রাজবাড়ী (পাঁচআনি রাজবাড়ী), চারআনি রাজবাড়ীসহ ১৩টির বেশি মন্দির এখনো টিকে আছে। ১৮৯৫ সালে মহারানী হেমন্তকুমারী দেবী ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীতে পাঁচআনি রাজবাড়ী নির্মাণ করেন। গোবিন্দ মন্দির, ছোট আহ্নিক মন্দির, ছোট শিব মন্দির, দোল মন্দির, বড় শিব মন্দির, জগন্নাথ/রথ মন্দির, বড় আহ্নিক মন্দির, ছোট গোবিন্দ মন্দির, গোপাল মন্দির, হাওয়াকানা, কৃষ্ণপুর মন্দির (সালামের মঠ), খিতিশ চন্দ্রের মঠ (শিব মন্দির), কেষ্ট খেপার মঠ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। অধিকাংশ মন্দিরে পোড়ামাটির ফলক দিয়ে অলংকরণ করা হয়েছে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
পুঠিয়ার উত্তরে বাগমারা ও দুর্গাপুর, দক্ষিণে চারঘাট ও বাঘা, পূর্বে নাটোর, পশ্চিমে দুর্গাপুর ও পবা উপজেলা অবস্থিত। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, পুঠিয়ার জনসংখ্যা ছিল ২,০৭,৪৯০ জন।
অর্থনীতি:
পুঠিয়া কৃষি ও মৎস্য সম্পদের উপর নির্ভরশীল। আম, কাঁঠাল, কলা, জাম, লিচু ইত্যাদি ফল-ফলাদি ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছের জন্য এটি বিখ্যাত। ছোট ও মাঝারি আকারের ক্ষুদ্র শিল্প ও গড়ে উঠেছে।
পরিবহন:
পুঠিয়ায় রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকার কারণে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রাজশাহী অথবা নাটোর যাওয়ার পর সড়কপথে পুঠিয়া যাওয়া সহজ।
উপসংহার:
ঐতিহাসিক স্থাপত্য, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমন্বয়ে পুঠিয়া একটি দর্শনীয় স্থান। এই উপজেলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।