রাজনৈতিক স্লোগান

আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৯ পিএম

রাজনৈতিক স্লোগান: জনমতের প্রতিফলন ও গণআন্দোলনের চালিকাশক্তি

ধোঁয়া যেমন আগুনের নিশানা, স্লোগান তেমনি রাজনৈতিক ধারার দিকচিহ্ন। কাঁটাগাছেও যেমন বাহারি ফুল ফুটে, স্লোগান তেমনি রাজনীতির কঠিন ময়দান থেকে উৎসারিত সুরধ্বনি। রাজনীতি না স্লোগান আগে-এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু এই দুইয়ের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। কঠিন রাজনৈতিক তত্ত্বকে সহজ ভাষায় জনসাধারণের হৃদয়ে ছুঁয়ে দিতে কিংবা মাথায় গেঁথে দিতে স্লোগান এক অব্যর্থ অস্ত্র। স্লোগান একটি জনগোষ্ঠীর সময় শুধু নয়, সংস্কৃতিরও পথরেখা।

রাজনীতির সঙ্গে স্লোগানের পরম্পরা ও গুরুত্ব আমাদের ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানের গ্রন্থাবলিতে সামান্যই স্থান পেয়েছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় রাজনৈতিক স্লোগান নিয়ে গবেষণা ও গ্রন্থ রচনা বিরল নয়। কিন্তু বাংলাদেশে ‘স্লোগানে স্লোগানে রাজনীতি’ সম্ভবত এ ধরনের প্রথম গ্রন্থ। মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও সাংবাদিক আবু সাঈদ খানের এই গ্রন্থ ২০০৮ সালে প্রথম প্রকাশের পর থেকেই বহুল আলোচিত।

উপমহাদেশে আধুনিক রাজনৈতিক ধারা সূচিত হয়েছিল সিপাহী বিদ্রোহের পর ১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু ‘নেটিভ’ রাজনীতি দানা বেঁধেছিল আরও পরে, বিশ শতকের গোড়ায়। তখন থেকেই রাজনৈতিক স্লোগানের পরিধি বাড়তে থাকে। ব্রিটিশবিরোধী লড়াইয়ের সাড়া জাগানো স্লোগান ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’। সেই থেকে ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ‘যদি তুমি ভয় পাও/ তবে তুমি শেষ/ যদি তুমি রুখে দাঁড়াও/ তবে তুমিই বাংলাদেশ’ পর্যন্ত সংকলিত হয়েছে এই বইয়ে।

নাম ‘স্লোগানে স্লোগানে রাজনীতি’ হলেও এতে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশ আন্দোলনের স্লোগানও সংকলিত হয়েছে। ব্রিটিশ, পাকিস্তান আমল এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশ ছাড়াও প্রতিবেশী ভারতের এই সময়ের আলোচিত স্লোগানগুলো স্থান পেয়েছে। দুই মলাটের মধ্যে যেন উঠে এসেছে গত এক শতাব্দীর রাজনীতির পত্র-পল্লব।

এই গ্রন্থ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অনন্য দলিল। এতে সংকলিত স্লোগানগুলো যেমন কৌতূহল উদ্দীপক, তেমনি চিন্তাজাগানিয়া। এই গ্রন্থে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ের আন্দোলনের স্লোগান, তাদের প্রভাব এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। গ্রন্থটিতে স্বাধীনতা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের স্লোগানের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও, গ্রন্থটিতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে স্লোগানের ব্যবহার এবং তার প্রভাবের উল্লেখ করা হয়েছে।

সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রদের ব্যবহৃত ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই সস্লোগানের জনপ্রিয়তা এবং তার রাজনৈতিক প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সাধারণত সফল আন্দোলন জনগোষ্ঠীর দাবিকে সহজ এবং প্রাঞ্জল ভাষায় প্রকাশ করে। সাধারণত গালিগালাজ যুক্ত স্লোগান অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি সৃষ্টি করে। সুতরাং স্লোগান রচনার ক্ষেত্রে ভাষার প্রয়োগ এবং শব্দার্থের উপর বিশেষ ধ্যান দেওয়া জরুরী।

মূল তথ্যাবলী:

  • স্লোগান জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রতীক
  • স্লোগান গণসংযোগের একটি কার্যকর হাতিয়ার
  • স্লোগানের ভাষা ও বিন্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
  • সফল স্লোগান জনগণের দাবি প্রতিফলিত করে
  • রাজাকার শব্দ ব্যবহারের বিতর্ক

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - রাজনৈতিক স্লোগান

৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

ফেনী বড় জামে মসজিদের এলইডি স্ক্রিনে রাজনৈতিক স্লোগান প্রদর্শিত হয়েছে।