ম্যানহাটন: বিশ্বের হৃৎস্পন্দন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটির পাঁচটি বরোর মধ্যে অন্যতম, এবং ক্ষুদ্রতম, ম্যানহাটন। নিউ ইয়র্ক কাউন্টি নামেও পরিচিত এই বরোটি মূলত ম্যানহাটন দ্বীপ নিয়ে গঠিত, যার আয়তন মাত্র ৫৯.৫ বর্গ কিলোমিটার (২৩ বর্গমাইল)। তবে, গভর্নর্স দ্বীপ, রান্ডালস দ্বীপ, ওয়ার্ডস দ্বীপ, রুজভেল্ট দ্বীপ, উ থান্ট দ্বীপ এবং মার্বল হিল (ব্রংক্সের প্রান্তে অবস্থিত একটি ছিটমহল) এর অন্তর্ভুক্ত। ২০২০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, এর জনসংখ্যা প্রায় ১৬ লক্ষেরও বেশি।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
ম্যানহাটনের ইতিহাস লেনাপে আদিবাসীদের সাথে জড়িত। ১৬২৪ সালে ডাচ উপনিবেশকারীরা এখানে একটি বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপন করে, যা পরবর্তীতে নিউ অ্যামস্টারডাম নামে পরিচিত হয়। ১৬৬৪ সালে ইংরেজরা এটি দখল করে এবং এর নামকরণ করে নিউ ইয়র্ক। ১৭৮৫ থেকে ১৭৯০ সাল পর্যন্ত এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯২০-এর দশকে হার্লেমে আফ্রিকান আমেরিকানদের সাংস্কৃতিক আন্দোলন, হার্লেম রেনেসাঁ, এখানে তীব্রতর হয়। ১৯৬৯ সালের স্টোনওয়াল দাঙ্গা আধুনিক সমকামী অধিকার আন্দোলনের সূচনা করে। দুর্ভাগ্যবশত, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারিয়েছে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দুটি দালান।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
ম্যানহাটন দ্বীপ হাডসন, ইস্ট এবং হার্লেম নদীর তীরে অবস্থিত। এর জনসংখ্যা ঘনত্ব বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ। বিভিন্ন ছোট দ্বীপও এ বরোর অন্তর্গত। ম্যানহাটন দ্বীপকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়- লোয়ার ম্যানহাটন, মিডটাউন এবং আপার ম্যানহাটন।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
ম্যানহাটন যুক্তরাষ্ট্রের, এবং বিশ্বের, অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু। ওয়াল স্ট্রিট, নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ এবং নাসড্যাক অবস্থিত এই বরোতেই। অনেক বহুজাতিক সংবাদমাধ্যম, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতিসংঘের সদর দপ্তরও এখানে অবস্থিত। পর্যটনও ম্যানহাটনের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উল্লেখযোগ্য স্থানাবলী:
এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং, ক্রাইসলার বিল্ডিং, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার (নতুন), টাইমস স্কয়ার, সেন্ট্রাল পার্ক, গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল টার্মিনাল, পেন স্টেশন, চায়নাটাউন, গ্রিনউইচ ভিলেজ, হার্লেম, এই সবই ম্যানহাটনের কিছু উল্লেখযোগ্য স্থান।
সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য:
ম্যানহাটন বিশ্বের সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থল। ব্রডওয়ে থিয়েটার, বিখ্যাত মিউজিয়ামগুলি (মেট্রোপলিটান মিউজিয়াম অফ আর্ট, মিউজিয়াম অফ মর্ডান আর্ট ইত্যাদি), এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য এটি বিখ্যাত।
পরিবহন ব্যবস্থা:
ম্যানহাটনের পরিবহন ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত। বিশ্বের বৃহত্তম সাবওয়ে ব্যবস্থা, বাস সেবা এবং ফেরি সেবা এখানে অবস্থিত।
শেষ কথা:
ম্যানহাটন কেবল একটি ভৌগোলিক স্থান নয়, এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনের একটি জীবন্ত কেন্দ্র। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব, অর্থনৈতিক শক্তি এবং সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ শহরের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।