মোহাম্মদ শরীফ নামটি দুই ব্যক্তিকে নির্দেশ করে। একজন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং অন্যজন একজন শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক।
- *মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শরীফ:**
এই মোহাম্মদ শরীফ নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার ছয়আনী টগবা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন (জন্ম তারিখ অজানা, মৃত্যু: ১৯৭১)। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের মার্চ-এপ্রিলে কুমিল্লার বিবিরবাজারে তিনি ও তার সহযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ৮ মে, ৩৯ বালুচ রেজিমেন্টের তীব্র আক্রমণের মুখে তারা যুদ্ধ করেও শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন এবং মোহাম্মদ শরীফসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। যুদ্ধে তার বুকে ও মাথায় গুলি লেগেছিল। তার মরদেহ ভারতে নিয়ে গিয়ে সমাহিত করা হয়। বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করেছে।
- *শিক্ষাবিদ মোহাম্মদ শরীফ হোসেন:**
অন্য মোহাম্মদ শরীফ (১৯৩৪-২০০৭) যশোরের খড়কি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক ছিলেন। ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে এম.এ পাশ করেন প্রথম শ্রেণীতে প্রথম। তিনি ছাত্রাবস্থায় মুসলিম ছাত্রলীগ ও পাকিস্তান আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন এবং ভাষা আন্দোলনেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি যশোর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও যশোর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। তিনি মাইকেল মধুসূদন কলেজে প্রভাষক ও ব্রজলাল কলেজে অধ্যাপক এবং একই কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যশোর পাবলিক লাইব্রেরির (বর্তমানে যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি) সম্পাদক থাকাকালীন তিনি বহু দুষ্প্রাপ্য পান্ডুলিপি সংগ্রহ করেন। তিনি যশোরে প্রথম বইমেলা প্রবর্তন করেন এবং গণশিক্ষার জন্য নৈশবিদ্যালয়, এতিমখানা (আঞ্জুমানে খালেকিয়া ও লিল্লাহ ট্রাস্ট), 'সন্দীপন' নামে একটি নারী উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রদের জন্য বই ব্যাংক এবং কোচিং সেন্টার গড়ে তোলেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয় কিন্তু পরে তিনি মুক্তি পান। বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক প্রদান করে। ২০০৪ সালে তার মৃত্যু হয়।