মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম: বাংলাদেশের মাটির বিজ্ঞানী
মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম ছিলেন বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং মৃত্তিকা বিজ্ঞানী। তাঁর অবদান বাংলাদেশের কৃষি ও মাটি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অতুলনীয়। তিনি 'সেভেন সয়েল ট্র্যাক্ট' ব্যবস্থাটি তৈরি করেন, যা বাংলাদেশের মাটির শ্রেণিবিন্যাসের ভিত্তি।
১৯১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব বাংলার নোয়াখালী জেলায় তাঁর জন্ম। ১৯৩৬ সালে ম্যাট্রিক এবং ১৯৩৮ সালে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা পাস করার পর, ১৯৪১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে প্রথম শ্রেণি অর্জনকারী প্রথম মুসলমান ছাত্র ছিলেন। পরের বছর একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৪৯ সালে, তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।
পিএইচডি শেষ করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৫০ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকারের মৃত্তিকা বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করেন। এই সময়কালে তিনি বাংলাদেশের মাটিকে সাতটি মাটি অঞ্চলে শ্রেণিবদ্ধ করেন, যা বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত মাটি জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক এবং ১৯৬৬ সালে মহাপরিচালক পদে পদোন্নতি পান। ১৯৬৭ সালে তিনি কৃষি পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অবধি পূর্ব পাকিস্তান ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৩ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ছিলেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর ফ্রিল্যান্স পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন। এছাড়াও তিনি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কেন্দ্র, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীতে কাজ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্স অ্যান্ড সোয়েল সায়েন্স সোসাইটি অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো ছিলেন।
৯ ফেব্রুয়ারি ২০০১ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মোহাম্মদ আমিরুল ইসলামের অবদান বাংলাদেশের কৃষি ও মাটি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে স্মরণীয়।