মেয়ে শব্দটির বহুবিধ অর্থ ও ব্যাপ্তি রয়েছে। সাধারণত এটি দ্বারা বোঝায় অল্পবয়সী মহিলা মানুষ, বিশেষ করে শিশু বা কিশোরী। তবে, এটি যুবতী, কন্যা, অথবা বান্ধবীকেও নির্দেশ করতে পারে, বয়স নির্বিশেষে।
সমাজের বিভিন্ন সংস্কৃতিতে মেয়েদের প্রতি আচরণ ও মর্যাদা নারীদের সামগ্রিক অবস্থানের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত। যেসব সমাজে নারীদের অবস্থান নিম্নমানের, সেখানে মেয়েরা অবাঞ্ছিত হতে পারে এবং সমাজ তাদের প্রতি কম বিনিয়োগ করতে পারে। মেয়ে ও ছেলেদের লালন-পালনে পার্থক্য খুবই সামান্য থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন হতে পারে, এমনকি লিঙ্গ মিশ্রণ বয়স অনুসারেও পরিবর্তিত হয়।
ইতিহাস জুড়ে মেয়েদের অবস্থান বিভিন্ন সংস্কৃতিতে নারীদের অবস্থানের সাথে সম্পর্কিত। যেখানে নারীদের সমান অধিকার আছে, সেখানে মেয়েদের প্রতিও বেশি যত্ন নেওয়া হয়। ঐতিহাসিকভাবে মেয়েদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছেলেদের তুলনায় অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হতো। তবে, ইউরোপে ছাপাখানা ও সংস্কারের পর শিক্ষার প্রসারের সাথে সাথে পরিবর্তন আসে। এলিজাবেথ প্রথম এর মত ব্যতিক্রমী উদাহরণও দেখা যায়, যিনি একজন রাণী হিসেবে সমান শিক্ষা পেয়েছিলেন।
আধুনিককালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মেয়েদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক সুযোগের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যদিও শিক্ষায় সমতা অর্জিত হয়েছে কিছু দেশে, তবে বেশিরভাগ দেশে এখনো উল্লেখযোগ্য বৈষম্য রয়েছে। মেয়েদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার হার ছেলেদের তুলনায় কিছুটা কম।
বিভিন্ন সংস্কৃতিতে মেয়েদের ‘বয়সে পৌঁছানো’র আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে, যেমনঃ জাপানের 'শিচি-গো-সান', আপাচিদের 'না'ই'ইস' আর ল্যাটিন আমেরিকার 'ফিয়েস্তা দে কুইন্সে আনোস'। এছাড়াও, মেয়েদের প্রথম মাসিক, প্রথম ব্রা পরা, ডেবিউটান্ট বল, প্রভৃতি অনেক ঘটনা মেয়েদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন হিসেবে মানা হয়।
বিভিন্ন দেশে মেয়েদের বিরুদ্ধে লিঙ্গ-নির্বাচনী গর্ভপাত, নারী যৌনাঙ্গ বিচ্ছেদ, শিশুবিবাহ, শিশু যৌন নির্যাতন, সম্মান হত্যা প্রভৃতি সহিংসতা ও অত্যাচারের ঝুঁকি রয়েছে। এইসব ঘটনার ফলে মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গুরুতর প্রভাব পড়ে। এই বৈষম্য দূর করার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সরকারী উদ্যোগ নিচ্ছে। বিভিন্ন অলাভজনক সংগঠন মেয়েদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক সুযোগের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।