মেডিকেল ট্যুরিজম: একটি জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতিফলন
মেডিকেল ট্যুরিজম কেবল অন্য দেশে চিকিৎসা নেওয়ার ঘটনা নয়; এটি একটি দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সক্ষমতা ও দুর্বলতার স্পষ্ট প্রতিফলন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অর্থনৈতিক প্রভাব অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বাংলাদেশ প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার হারাচ্ছে এই খাতে, যার বেশিরভাগই ভারতের মতো দেশের স্বাস্থ্যখাতকে শক্তিশালী করছে।
২০২৩ সালে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৫৭০ জন বাংলাদেশি স্বাস্থ্যসেবার জন্য বিদেশ গমন করেছেন, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৪৮% বেশি। এই পরিসংখ্যানটি আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ব্যর্থতারই ইঙ্গিত বহন করে। আশি ও নব্বইয়ের দশকে কেবলমাত্র অভিজাত শ্রেণীর কিছু মানুষ বিদেশে চিকিৎসা করাতেন, কিন্তু বর্তমানে এটি ব্যাপক হয়ে উঠেছে।
মেডিকেল ট্যুরিজম বর্তমানে ১০০ বিলিয়ন ডলারের একটি বৈশ্বিক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। ভারত, থাইল্যান্ড, তুরস্ক ও সিঙ্গাপুর এ খাতে অন্যতম শক্তিশালী দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫ লাখ ডলার খরচ হতে পারে এমন একটি লিভার ট্রান্সপ্লান্ট ভারতে মাত্র ৫০ হাজার ডলারে করা যায়, যা বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের কারণ ব্যাখ্যা করে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি মেডিকেল ট্যুরিজমের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিদেশে ব্যয় হওয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার যদি দেশের স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করা হত, তাহলে এর সুফল অর্থনীতিতে অনুভূত হত।
সমাধান হিসেবে সরকারকে স্বাস্থ্যসেবা খাতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ, আধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত বিশেষায়িত স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলা, বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা জায়ান্টদের সাথে কৌশলগত সহযোগিতা, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, চিকিৎসা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মান উন্নয়ন, এবং স্বচ্ছতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিতে হবে।