মুস্তফা মনোয়ার: বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী, নাট্য নির্দেশক ও শিল্প গবেষক
মুস্তফা মনোয়ার (জন্ম: ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৫) বাংলাদেশের একজন অসাধারণ প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব। চিত্রশিল্প, নাট্য নির্দেশনা, এবং পাপেট শিল্পে তার অবদান অতুলনীয়। তিনি শুধুমাত্র একজন শিল্পীই ছিলেন না, বরং একজন উদার ও মহৎ শিক্ষকও ছিলেন, যিনি শিল্পকলার বিকাশে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নিয়োজিত করেছিলেন।
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:
তার জন্ম যশোরের মাগুরা (বর্তমান মাগুরা জেলা) মহকুমার শ্রীপুর থানার অন্তর্গত নাকোল গ্রামে মাতুলালয়ে। পৈত্রিক নিবাস ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার মনোহরপুর গ্রামে। তার পিতা প্রয়াত কবি গোলাম মোস্তফা এবং মাতা জমিলা খাতুন। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। কলকাতার শিশু বিদ্যাপীঠে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর নারায়ণগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন এবং কলকাতা চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫৯ সালে ফাইন আর্টসে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। ১৯৬৫ সালে তিনি মেরী মনোয়ারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের এক ছেলে (সাদাত মনোয়ার, বাংলাদেশ বিমানের পাইলট) এবং এক মেয়ে (নন্দিনী মনোয়ার, চাকুরীজীবী)।
কর্মজীবন ও অবদান:
মুস্তফা মনোয়ার কর্মজীবন শুরু করেন পূর্ব পাকিস্তান চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে। পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন, যেমন: বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপমহাপরিচালক, শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ টেলিভিশন, ঢাকার জেনারেল ম্যানেজার এবং এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি জনবিভাগ উন্নয়ন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান এবং এডুকেশনাল পাপেট ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তার বিশেষ অবদান ছিল বাংলাদেশে পাপেট শিল্পের উন্নয়ন ও জনপ্রিয়করণে। তিনি ‘নতুন কুঁড়ি’ শিশু অনুষ্ঠান সহ অসংখ্য জনপ্রিয় টিভি নাটক ও অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অসাধারণ দক্ষতা প্রদর্শন করেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলনের সময় তিনি টেলিভিশনে প্রচারিত ‘সংগ্রাম সংগ্রাম সংগ্রাম’ গানটির পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন।
স্বীকৃতি ও পুরস্কার:
তার শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০০৪ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময় অন্যান্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
সম্প্রতি:
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বয়সজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মুস্তফা মনোয়ার রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।