মিয়ানমারের সামরিক সরকার

আপডেট: ৪ জানুয়ারী ২০২৫, ৫:২৪ এএম

মিয়ানমারের সামরিক সরকার, যা 'তাতমাদোও' নামেও পরিচিত, ১৯৪৮ সালে দেশটির স্বাধীনতার পর থেকেই রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তির পর থেকে দেশটিতে বেশ কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে, এর মধ্যে সর্বশেষটি ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। বর্তমান সেনাপ্রধান মিন অং লাইং এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন এবং বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন।

মিয়ানমারের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যারা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টিকে আছে। ১৯৯০ এবং ২০০০-এর দশকে কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাও তাদের উপর তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। তাদের আধিপত্যের রহস্য জড়িত দেশটির ইতিহাসের সাথে। বিশ্লেষকদের মতে, 'মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটির চেয়েও বেশি পুরনো'।

সামরিক বাহিনী তাদের ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করেছে। তারা বিভিন্ন ডিক্রি জারি করেছে, রাজনৈতিক দল গঠন ও নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং সংবিধানে তাদের অনুকূলে বিধি অন্তর্ভুক্ত করেছে। তারা সংবিধানে এমন ব্যবস্থা রেখেছে যাতে তাদের অনুমোদন ছাড়া সংশোধন করা যায় না। ২০২০ সালের নির্বাচনে সেনা সমর্থিত রাজনৈতিক দলের পরাজয় সামরিক বাহিনীর জন্য অপমানজনক ছিল, যা অভ্যুত্থানের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী গণতন্ত্রের পক্ষে কখনো ছিল না। দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছরের মধ্যে তারা ডিক্রি জারির মাধ্যমে ৩৭ বছর শাসন করেছে। সাংবিধানিক ক্ষমতার মাধ্যমে ১৯ বছর শাসন করেছে এবং ৫ বছর নিয়ন্ত্রিত শাসন ক্ষমতায় ছিল। মাত্র ১২ বছর বেসামরিক প্রশাসন ছিল। তাতমাদোও'র ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তারা সেনার সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। ১৯৫৮ সালে এক লাখ ১০ হাজার সদস্য ছিল যা ১৯৯৯ সালে বেড়ে চার লাখে দাঁড়ায়।

২০০৮ সালে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হয় যার মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা বজায় রাখা হয়। পার্লামেন্টে ২৫% আসন তাদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়, সাংবিধানিক পরিবর্তনে তাদের সম্মতির প্রয়োজনীয়তা থাকে। প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র এবং সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রণালয় সামরিক বাহিনীর হাতে থাকে। সংবিধানে ‘ক্যু ক্লজ’ বা ‘সেনা অভ্যুত্থানের’ ধারাও রাখা হয়েছে।

সামরিক বাহিনীর অর্থনৈতিক ক্ষমতাও উল্লেখযোগ্য। তারা দুটি বৃহৎ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করে। অভ্যুত্থানের পর দেশের অর্থনীতি টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে।

২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে ব্যাপক জনবিরোধ শুরু হয়। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বিদ্রোহী গোষ্ঠী সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে তিনটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জোট গুরুত্বপূর্ণ আক্রমণ শুরু করে, যার ফলে সরকারের নিয়ন্ত্রণ কমে গেছে।

বর্তমানে মিয়ানমারের পরিস্থিতি অত্যন্ত অস্থিতিশীল। সরকারের নিয়ন্ত্রণ কমে যাওয়া, অর্থনৈতিক সংকট এবং জনবিরোধের কারণে সামরিক সরকারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। আরও তথ্য পাওয়া গেলে আমরা আপনাকে অবহিত করব।

মূল তথ্যাবলী:

  • ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিন অং লাইং ক্ষমতায় আসেন।
  • সামরিক বাহিনী দেশটির রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করে আসছে।
  • ২০০৮ সালের সংবিধানে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা বজায় রাখার ব্যবস্থা রয়েছে।
  • অভ্যুত্থানের পর দেশে ব্যাপক জনবিরোধ ও অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে।
  • বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বিদ্রোহী গোষ্ঠী সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - মিয়ানমারের সামরিক সরকার

জানুয়ারি ৪, ২০২৫

মিয়ানমারের সামরিক সরকার বন্দি মুক্তির ঘোষণা দিয়েছে।

০৪ জানুয়ারি

মিয়ানমারের সামরিক সরকার ৫৮৬৪ জন বন্দীকে সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি দিয়েছে।

৪ জানুয়ারী ২০২৫, ৬:০০ এএম

মিয়ানমারের সামরিক সরকার ৫৮৬৪ জন বন্দীকে মুক্তি দিচ্ছে।