মাপুতো: পূর্ব আফ্রিকার মোজাম্বিকের রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী মাপুতো (স্থানীয় উচ্চারণে মাপুতু)। ভারত মহাসাগরের একটি প্রাকৃতিক উপসাগরের তীরে অবস্থিত এই বন্দর নগরীটির আয়তন ৩৪৭ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ১১ লক্ষ (২০১৭ সালের হিসেব অনুযায়ী)। মাপুতো একটি বহু-সংস্কৃতির আন্তর্জাতিক নগরী, যেখানে আফ্রিকার বান্টু ও টসোঙ্গা সংস্কৃতির পাশাপাশি পর্তুগিজ, আরব, ভারতীয় ও চীনা সংস্কৃতির মিশ্রণ দেখা যায়।
ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত: প্রাচীন টসোঙ্গা জনগোষ্ঠী এই অঞ্চলে প্রথম বসতি স্থাপন করে। ১৫৪৪ সালে পর্তুগিজ নাবিক লোরেন্সো মার্কেস এলাকাটি অন্বেষণ করেন এবং পরে ১৭৮১ সালে পর্তুগিজরা এখানে একটি দুর্গ স্থাপন করে। ১৮৫০ সালের দিকে দুর্গের চারপাশে একটি শহর গড়ে ওঠে এবং ১৮৭৭ সালে এটিকে শহরের মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৮৯৮ সালে পর্তুগিজ মোজাম্বিকের রাজধানী হিসেবে মাপুতোকে নির্বাচন করা হয়। লোরেন্সো মার্কেস নামে পরিচিত এই শহরটি ১৯৭৬ সালে মাপুতো নামে নামকরণ করা হয় মোজাম্বিকের স্বাধীনতা লাভের পর। মোজাম্বিক গৃহযুদ্ধের সময় শহরটির অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরবর্তীতে পুনরুজ্জীবিত হয়।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ু: মাপুতো উপসাগরের পাশে অবস্থিত মাপুতো টেম্বে, মবুলুজি, মাতোলা এবং ইনফুলেন নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত। এখানকার জলবায়ু উষ্ণ আর্দ্র, বার্ষিক বৃষ্টিপাত প্রায় ৮২৯.৬ মিলিমিটার।
অর্থনীতি: মাপুতোর অর্থনীতি বন্দর কেন্দ্রিক। কৃষিজাত দ্রব্য, খনিজ সম্পদ ইত্যাদির রপ্তানি এর প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। তবে শিল্প ও পরিষেবা খাতও গুরুত্বপূর্ণ। মাপুতোতে বেশ কিছু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যার মধ্যে এডুয়ার্ডো মন্ডলেন বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য।
স্থাপত্য ও সংস্কৃতি: মাপুতোর স্থাপত্যে পর্তুগিজ ঔপনিবেশিক, আর্ট ডেকো, বাউহাউস, এবং ব্রুটালিস্ট স্থাপত্যশৈলী দেখা যায়। এখানে অনেক রেস্তোরাঁ, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং সিনেমা হল রয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা: স্বাধীনতা চত্বর, সিটি হল, মাপুতো দুর্গ, কেন্দ্রীয় বাজার, টুন্ডুরু উদ্যান, মাপুতো রেলওয়ে স্টেশন উল্লেখযোগ্য।
প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালের ১১ জুলাই আফ্রিকান ইউনিয়ন কর্তৃক গৃহীত আফ্রিকান চার্টার অন হিউম্যান অ্যান্ড পিপলস রাইটসের উপর প্রোটোকল, যা মাপুতো প্রটোকল নামে পরিচিত, মাপুতোতেই অনুমোদিত হয়।