মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও বর্তমান
মানিকগঞ্জ জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হল ঘিওর। ১৪৮.৯২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলা ২৩°৪৭´ থেকে ২৩°৫৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪৯´ থেকে ৮৯°৫৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। উত্তরে দৌলতপুর, দক্ষিণে শিবালয় ও হরিরামপুর, পূর্বে মানিকগঞ্জ সদর ও সাটুরিয়া, এবং পশ্চিমে শিবালয় ও দৌলতপুর উপজেলা ঘিওরকে ঘিরে রয়েছে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
১৯১৯ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ঘিওর ১৯৮৩ সালে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়, ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর, তেরশ্রী গ্রামে পাকিস্তানি সেনারা ৪৩ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধারা দুইবার ঘিওর থানা আক্রমণ করে এবং প্রচুর গোলাবারুদ অর্জন করে। ঘিওরে একটি স্মৃতিফলক ও একটি স্মৃতিস্তম্ভ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধারণ করে রয়েছে। শ্রীবাড়ী বড়টিয়া গ্রামের নীলকুঠি এবং পাঁচথুবির বৌদ্ধবিহার ঘিওরের প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন।
জনসংখ্যা ও জনজীবন:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ঘিওরের জনসংখ্যা প্রায় ১৪৬,২৯২। মুসলিম ১২৭,৩৮১, হিন্দু ১৮,৯০১, খ্রিস্টান ৬ এবং অন্যান্য ৪ জন। জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি, ব্যবসা, চাকরি, এবং অন্যান্য কুটির শিল্প। প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, সরিষা, আলু, পিঁয়াজ, রসুন, মরিচ এবং বিভিন্ন শাকসবজি। লেবু, আম, কাঁঠাল, পেঁপে, কলা, পেয়ারা, কামরাঙা প্রধান ফল-ফলাদি।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি:
শিক্ষার হার ৫৪.৫%। ঘিওর ডিএন হাইস্কুল (১৯২৯), তেরশ্রী কেএন হাইস্কুল (১৯২২), বানিয়াজুড়ি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫), এবং সিংজুড়ি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৬) উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ৮৩টি ক্লাব, ২টি লাইব্রেরি, ১টি সিনেমা হল, ২টি নাট্যদল এবং ১টি যাত্রাপার্টি ঘিওরের সাংস্কৃতিক চিত্রের অংশ।
অবকাঠামো:
৫২ কিমি পাকা রাস্তা, ১২ কিমি আধাপাকা রাস্তা, ২২০ কিমি কাঁচা রাস্তা, ৪৭টি ব্রিজ এবং ৪২টি কালভার্ট ঘিওরের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বর্ণনা করে। সকল ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন, যদিও ৫৩.৫% পরিবারই বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারে। ৯৭.২% পরিবার নলকূপের পানি ব্যবহার করে। স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় ১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৮টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৬টি পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, ৪টি ক্লিনিক এবং ১টি পশু চিকিৎসালয় রয়েছে।
ঘিওর হাট:
২০০ বছরেরও বেশি পুরোনো ঘিওর হাট একসময় গরু, পাট, এবং ধান বিক্রির জন্য বিখ্যাত ছিল। বর্ষাকালে এটি ডিঙি নৌকার হাট হিসাবে পরিচিত। এই হাটের ঐতিহাসিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম।
উপসংহার:
ঘিওর উপজেলার ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব অসাধারণ। আধুনিক উন্নয়নের সাথে সাথে ঐতিহ্য রক্ষা এবং উন্নয়নের পথে অগ্রসর হওয়া ঘিওরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।