মাইজভান্ডার দরবার

মাইজভান্ডার দরবার: একটি ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ

'দরবার' শব্দটি ফারসি উৎসের, যার অর্থ রাজসভা বা নির্বাহী সরকার। মুগল আমলে দরবার ছিল রাজকীয় সভা, যেখানে আমির, মন্ত্রী, রাজদূত, বিচারপ্রার্থী এবং অন্যান্যরা উপস্থিত থাকতেন। সম্রাটের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত 'দরবার-ই-আলা' ছিল সর্বোচ্চ সভা। প্রাদেশিক স্তরেও সুবাহদাররা তাদের দরবার অনুষ্ঠান করতেন, যেখানে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম সম্পাদন, বিচার বিভাগীয় রায় ঘোষণা এবং সামাজিক আয়োজন করা হতো। মুগল দরবার শাসক ও প্রজার মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল।

ব্রিটিশরা মুগল দরবারের জাঁকজমক অনুসরণ করেছিল, তবে তাদের দরবারে রাষ্ট্রীয় আলোচনা কম ছিল। লর্ড ওয়েলেসলীর সময় থেকে ফোর্ট উইলিয়মে বার্ষিক দরবারের রীতি চালু হয়। দেশীয় রাজ্যের শাসক, জমিদার এবং কর্মকর্তারা তাদের আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য উপস্থিত থাকতেন। ১৯১১ সালের দিল্লি অভিষেক দরবার ছিল এ ধরণের সমাবেশের মধ্যে বৃহত্তম।

১৯১১ সালের দিল্লি দরবার: রাজনৈতিক গুরুত্ব

এই দরবার রাজা পঞ্চম জর্জের অভিষেকের অজুহাতে আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী দাবি এবং ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ মোকাবেলা করা। ব্রিটিশ সরকার দাবি মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু বিক্ষোভ আরও বাড়ার আশঙ্কায় রাজকীয় দরবারের মাধ্যমে ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা করে।

দরবারে রাজা পঞ্চম জর্জ ভারতের বিভিন্ন গোষ্ঠীর দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেন। এতে ভূমিদান, অতিরিক্ত বেতন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, সম্মানসূচক খেতাব প্রদানের ঘোষণা অন্তর্ভুক্ত ছিল। বৃহৎ রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘোষণা করা হয়, যার মধ্যে রাজধানী স্থানান্তর, বঙ্গভঙ্গ বাতিল, গভর্নর-ইন-কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা, নতুন প্রদেশ গঠন এবং আসামের মর্যাদা হ্রাস অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ব্রিটেনে এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করা হলেও, দিল্লি দরবার তার উদ্দেশ্যে সফল হয়। ঘোষণাগুলি আইনে পরিণত হয়, উগ্র জাতীয়তাবাদীদের সাংবিধানিক রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনে এবং মুসলিম নেতাদের প্রতিক্রিয়া সীমিত রাখে। বাংলার জন্য গভর্নর প্রদেশের মর্যাদা লাভের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের অগ্রগতির অভাব পূরণ হয়।

মূল তথ্যাবলী:

  • মুগল আমলে দরবার ছিল রাজকীয় সভার প্রতিষ্ঠান।
  • ব্রিটিশরা মুগল দরবারের রীতি অনুসরণ করেছিল।
  • ১৯১১ সালের দিল্লি অভিষেক দরবার ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা।
  • দরবারে বঙ্গভঙ্গ বাতিল, গভর্নর-ইন-কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা এবং রাজধানী স্থানান্তরের ঘোষণা দেওয়া হয়।
  • দরবারের ঘোষণাগুলি উগ্র জাতীয়তাবাদীদের সাংবিধানিক রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনে।

গণমাধ্যমে - মাইজভান্ডার দরবার

21 ডিসেম্বর, 2024

এই দরবারের ৯৬তম খোশরোজ শরিফ উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।