মহিউদ্দিন খান

আপডেট: ৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৩:১৮ এএম

মহিউদ্দীন খান: দুই ব্যক্তিত্বের জীবনী ও কীর্তি

বাংলাদেশে ‘মহিউদ্দীন খান’ নামটি দুজন ব্যক্তির সাথে জড়িত। একজন রাজনীতিবিদ, লেখক ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, অন্যজন একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক এবং ইসলামী চিন্তাবিদ। এই নিবন্ধে আমরা উভয় মহিউদ্দীন খান সম্পর্কে আলোচনা করবো।

ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর (রাজনীতিবিদ):

ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর (জন্ম: ১৯৪২) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, লেখক ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা। চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার গুলবাহার গ্রামে জন্মগ্রহণকারী ড. আলমগীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ও বস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উন্নয়ন অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন এবং বস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকারের সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করে ৩২ বছর সরকারের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানের উপবিভাগীয় কর্মকর্তা (সিএসপি ডিসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত যশোরের জেলা প্রশাসক ছিলেন। তিনি চাঁদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য। ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সরকারি হিসাব-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান এবং ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। তাকে পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও গঙ্গা পানি চুক্তির রূপকার বলা হয়। তিনি বিভিন্ন বিতর্কের মুখোমুখি হয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে ২০১৩ সালের সাভার ভবন ধসের ঘটনায় তার বিতর্কিত মন্তব্য এবং ফারমার্স ব্যাংকে অনিয়মের অভিযোগ।

মাওলানা মুহিউদ্দীন খান (সাংবাদিক ও ইসলামী চিন্তাবিদ):

মাওলানা মুহিউদ্দীন খান (১৯ এপ্রিল ১৯৩৫ - ২৫ জুন ২০১৬) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক, ইসলামী চিন্তাবিদ ও বহু গ্রন্থ প্রণেতা ছিলেন। তাকে বাংলা ভাষায় সীরাত সাহিত্যের জনক বলা হয়। কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার ছয়চির গ্রামে জন্মগ্রহণকারী মুহিউদ্দীন খানের পৈতৃক নিবাস ছিল ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার আনসার নগরে। তিনি ১৯৫১ সালে আলিম এবং ১৯৫৩ সালে ফাজিল ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদরাসা থেকে হাদিস বিষয়ে ও ১৯৫৬ সালে ফিকহ বিষয়ে কামিল ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ‘মাসিক দিশারী’, ‘সাপ্তাহিক নয়া জামানা’ এবং ‘মাসিক মদীনা’র সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮৮ সালে সৌদিভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘রাবেতায়ে আলমে ইসলামী’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি বাংলা ভাষায় ইসলামী সাহিত্য রচনা, সম্পাদনা ও প্রকাশনার ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রেখেছেন। প্রায় ১০৫ খানা গ্রন্থ অনুবাদ ও রচনা করেছেন। তার সম্পাদিত ‘মাসিক মদীনা’র প্রশ্নোত্তর সঙ্কলন ‘সমকালীন জিজ্ঞাসার জবাব’ ২০ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ শফীর ৮ খণ্ডের তাফসির গ্রন্থ ‘মাআরিফুল কুরআন’ উর্দু থেকে বাংলায় অনুবাদ করেন। তার প্রতিষ্ঠিত মদীনা পাবলিকেশন্স কুরআন, হাদীস, সীরাতে রাসূল, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অভিধান বিষয়ক ৬০০ গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। তিনি মুতামার আল আলম আল ইসলামী এর বাংলাদেশ শাখার প্রেসিডেন্ট, জাতীয় সীরাত কমিটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, নাস্তিক-মুরতাদ প্রতিরোধ আন্দোলন ইসলামী মোর্চার সভাপতি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশর সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের প্রধান ছিলেন। ২০১৬ সালের ২৫ জুন তিনি মারা যান।

উপসংহার:

উভয় মহিউদ্দীন খানই তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছেন। রাজনৈতিক মহলে একজন ও ধর্মীয় ও সাহিত্য জগতে অন্যজন তাদের নাম অমর করে রেখে গেছেন।

মূল তথ্যাবলী:

  • ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ, লেখক ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা।
  • তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রীপদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
  • মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ছিলেন বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক এবং ইসলামী চিন্তাবিদ।
  • তিনি বাংলা ভাষায় সীরাত সাহিত্যের জনক হিসেবে পরিচিত।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - মহিউদ্দিন খান

মহিউদ্দিন খান বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ২০২৫ সেশনের জন্য সেক্রেটারি নির্বাচিত হন।