মসজিদুল আকসা: ইতিহাস, গুরুত্ব ও বর্তমান অবস্থা
ফিলিস্তিনের জেরুজালেম শহরের পুরানো শহরে অবস্থিত মসজিদুল আকসা মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ হিসেবে পরিচিত। এটি ইসলামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত এবং এর গুরুত্ব অপরিসীম। মসজিদুল আকসা কেবল একটি মসজিদ নয়, বরং ইসলামি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটি মহৎ কেন্দ্রবিন্দু।
প্রাথমিক ইতিহাস:
মসজিদুল আকসার ইতিহাস খুবই প্রাচীন। মুসলিম বিশ্বাস অনুযায়ী, ইব্রাহিম (আঃ) এর সময় থেকেই এই স্থানটি পবিত্র উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ইসহাক (আঃ) এবং ইয়াকুব (আঃ) এর সময়েও এখানে ইবাদতের প্রমাণ পাওয়া যায়। দাউদ (আঃ) ও সুলায়মান (আঃ) এই স্থানটি আরও সম্প্রসারিত করেন এবং সুলায়মান (আঃ) এর সময়ে একটি বিশাল ও সুন্দর উপাসনালয় নির্মিত হয়। মুসলমানদের বিশ্বাস, পরবর্তীতে এই উপাসনালয়টি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং বর্তমান মসজিদটি বিভিন্ন সময়ে পুনর্নির্মিত ও সম্প্রসারিত হয়।
মিরাজের রাত:
মসজিদুল আকসার গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায় মিরাজের রাতের ঘটনার মাধ্যমে। মুসলিম বিশ্বাস অনুযায়ী, এই রাতে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বোরাক নামক বিশেষ বাহনে চড়ে মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় এসেছিলেন এবং সেখান থেকে ঊর্ধ্বাকাশে যাত্রা করেছিলেন। এই ঘটনাটি কুরআনে উল্লেখিত হওয়ায় মসজিদুল আকসার মর্যাদা অসীমভাবে বেড়েছে।
ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়:
মসজিদুল আকসা ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শাসকের অধীনে ছিল। খলিফা উমর (রাঃ) এখানে প্রথম একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে উমাইয়া ও আব্বাসীয় খলিফাদের শাসনামলে মসজিদটির পুনর্নির্মাণ ও সম্প্রসারণ করা হয়। ক্রুসেডারদের শাসনামলে এটির ক্ষতি হয়। সুলতান সালাহউদ্দিন এই স্থানটি মুসলিমদের কাছে পুনরায় ফিরিয়ে আনেন। উসমানীয় ও ব্রিটিশ শাসনামলেও মসজিদটির সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।
বর্তমান অবস্থা:
বর্তমানে মসজিদুল আকসা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় অবস্থিত। ইসলামি ওয়াকফ এর তত্ত্বাবধানে রয়েছে মসজিদটি। তবে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের কারণে এটি প্রায়শই রাজনৈতিক ও ধর্মীয় তরজার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। মসজিদটিতে মুসলমানদের প্রবেশে কখনও কখনও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
গুরুত্ব:
মসজিদুল আকসার ইসলামী ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। এটি কেবল মুসলমানদের কাছেই পবিত্র নয়, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের কাছেও এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য। মসজিদুল আকসার বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করা হয় প্রায় সকল মুসলমানদের মনে।