মতিঝিল ও দিলকুশা: ঢাকার ঐতিহাসিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রদুটি
ঢাকা শহরের ঐতিহাসিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি এলাকা হল মতিঝিল ও দিলকুশা। এই দুটি এলাকা পরস্পরের অত্যন্ত নিকটে অবস্থিত এবং একসাথে ঢাকার বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক চেহারার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
মতিঝিল: ঐতিহাসিক পটভূমি
মতিঝিলের ইতিহাস মুঘল আমলে ফিরে যায়। মির্জা মোহাম্মদ মুকিমের মহল হিসেবে এলাকাটি সমধিক পরিচিত ছিল। এই মহলের ভেতরে ছিলো একটি বড় দিঘি (পুকুর), যার নাম ছিল সুকাকু মহলের পুকুর। জনশ্রুতি অনুযায়ী, মির্জা মুকিমের কন্যা প্রতিদিন একটি করে মোতি ও আলংকার এই দিঘিতে ফেলতেন, যার কারণে দিঘিটি 'মোতির দিঘি' বা 'মতিঝিল' নামে পরিচিত হয়। পরে, এলাকাটির নামও 'মতিঝিল' রাখা হয়। ব্রিটিশ আমলে, ঢাকার নওয়াবরা এই এলাকা অধিগ্রহণ করে বাগান ও বাড়ি নির্মাণ করেন।
দিলকুশা: নবাব পরিবারের আভিজাত্য
মতিঝিলের পাশেই অবস্থিত দিলকুশা। নবাব স্যার সলিমুল্লাহর ভগ্নিপতি, নবাব আজিম, এখানে 'দিলকুশা' নামে একটি মনোরম প্রাসাদ নির্মাণ করেন। এই প্রাসাদের নাম অনুসারেই এলাকাটির নামকরণ হয়। বর্তমানে প্রাসাদটির স্থলে আধুনিক ভবন নির্মিত হলেও, একটি প্রাচীন মসজিদ এবং নবাব পরিবারের কয়েকজন সদস্যের সমাধি এখনও বর্তমান।
মতিঝিল ও দিলকুশা: বর্তমান অবস্থা
আজকের মতিঝিল ও দিলকুশা ঢাকার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এখানে অসংখ্য ব্যাংক, শিল্প প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও অফিস স্থাপিত। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় মতিঝিলে অবস্থিত। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গুলশান, বনানী, বারিধারা প্রভৃতি এলাকার উন্নয়নের সাথে সাথে কিছু প্রতিষ্ঠান নতুন এলাকায় স্থানান্তরিত হওয়ার কথা শোনা যায়। ফলে মতিঝিলের কিছু ভবন ফাঁকা পড়ে আছে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব
মতিঝিল ও দিলকুশা শুধুমাত্র বাণিজ্যিক কেন্দ্র নয়, এই দুটি এলাকায় ঢাকার ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক অনেক স্মৃতি সংরক্ষিত আছে। বঙ্গভবন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, বিভিন্ন ঐতিহাসিক মসজিদ ও সমাধিস্থল এই এলাকার ঐতিহাসিক গুরুত্ব আরও প্রতিফলিত করে।
ভবিষ্যৎ
মতিঝিল ও দিলকুশার ভবিষ্যৎ ঢাকার উন্নয়ন পরিকল্পনার উপর নির্ভর করে। যদিও কিছু সমস্যা রয়েছে, তবুও এই দুই এলাকা ঢাকার ঐতিহ্য ও অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে অব্যাহতভাবে তার গুরুত্ব ধারণ করবে বলে আশা করা যায়।