মজনু শাহ: বাংলার ইতিহাসে এক অমর নায়ক
মজনু শাহ, মাদারিয়া তরিকার এক সুফি সাধক এবং বাংলায় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিপত্যের বিরুদ্ধে ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলনের এক অন্যতম নেতা ছিলেন। তার প্রকৃত নাম ও প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। তিনি মেওয়াট অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন বলে জানা যায়। মজনু শাহ নামেই তিনি অধিক পরিচিত হলেও, কখনও কখনও মজনু শাহ বুরহানা কিংবা মজনু ফকির নামেও তাঁর উল্লেখ পাওয়া যায়।
আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে, বিহার ভিত্তিক মাদারিয়া সুফি তরিকার নেতা শাহ সুলতান হাসান সুরিয়া বুরহানার মৃত্যুর পর মজনু শাহ এই তরিকার নেতৃত্ব লাভ করেন। তিনি বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে সংগ্রামে সুফি দরবেশ, যোগী, সন্ন্যাসী ও সাধারণ জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেন। বিহারের পশ্চিমাঞ্চল থেকে বাংলার পূর্বপ্রান্ত পর্যন্ত তিনি অবিরাম ভ্রমণ করে ফকির-সন্ন্যাসীদের সংগঠিত করেন এবং ইংরেজবিরোধী প্রতিরোধে অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি বাংলার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন অর্জন করেন।
১৭৬০ সাল থেকে মজনু শাহ বাংলায় ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন এবং দীর্ঘ ৩৬ বছর কোম্পানির বিরুদ্ধে অবিরাম সংগ্রাম চালিয়ে যান। তার সশস্ত্র সংগ্রামে ৫০,০০০ এরও বেশি ফকির-সন্ন্যাসী অংশগ্রহণ করে। তিনি বিভিন্ন স্থানে কোম্পানির কুঠি, রাজস্ব অফিস ও স্থাপনা দখল করেন এবং কোম্পানির সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেন। এসব যুদ্ধে অনেক ইংরেজ সৈন্য ও কর্মচারী নিহত হয়। মজনু শাহের প্রধান কৃতিত্ব ছিল ফকির-সন্ন্যাসীদের ঐক্য বজায় রেখে দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া।
১৭৮৬ সালে ময়মনসিংহের কাছে কালেশ্বর এলাকায় লেফটেন্যান্ট ব্রেনানের নেতৃত্বে কোম্পানির বাহিনীর কাছে মজনু শাহ পরাজিত হন এবং আহত হন। এই যুদ্ধে তাঁর অনেক অনুসারীও নিহত হন। আহত অবস্থায় তিনি মেওয়াটে নিয়ে যাওয়া হন এবং ১৭৮৮ সালের ২৬ জানুয়ারি কানপুরের মকানপুরে শাহ মাদারের দরগায় মৃত্যুবরণ করেন বলে জানা যায়।
মজনু শাহের জীবন ও সংগ্রাম বাংলার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জোগাড় করে পরবর্তীতে এই নিবন্ধটি সম্পূর্ণ করা হবে।