ব্রাসেলস: ইউরোপের হৃৎপিণ্ড
বেলজিয়ামের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর ব্রাসেলস (ফরাসি: Bruxelles, ওলন্দাজ: Brussel) উত্তর সাগর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে, শেল্ডে নদীর একটি উপনদী সেনে নদীর উপত্যকায় অবস্থিত। এর মৃদু জলবায়ু, বৃক্ষশোভিত রাজপথ, চমৎকার উদ্যান, ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ ও সৌন্দর্যমণ্ডিত ভবন ইউরোপের অন্যতম আকর্ষণীয় শহর হিসেবে ব্রাসেলসকে সুপরিচিত করে তুলেছে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে সেনে নদীর উপরের একটি দ্বীপে দুর্গ নির্মাণের সাথে ব্রাসেলসের ইতিহাসের সূচনা। ১২শ শতকে এটি ব্রাবান্টের ডিউকদের অধীনে এসে ব্যবসা-বাণিজ্য ও হস্তশিল্পের কেন্দ্রে পরিণত হয়। ১৩১২ ও ১৩৫৬ সালে ডিউকদের চার্টার ব্যবসা-বাণিজ্য আরও প্রসারিত করে। ১৩৮৩ সালে লিউভেনের পরিবর্তে ব্রাসেলস ব্রাবান্ট ডিউকরাজ্যের রাজধানী হয়। ১৫৩০ সালে হাবসবুর্গদের শাসনাধীন স্পেনীয় নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হিসেবে ব্রাসেলসের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায়। ১৬শ-১৭শ শতকে ধর্মীয় দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে ব্রাসেলস বহুবার হাত বদল করে। ১৭৯২ সালে ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্স দখল করে এবং ১৮১৫ সাল পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রাখে। ওয়াটারলু যুদ্ধের পর, ১৮৩০ সালে বেলজিয়ামের স্বাধীনতা যুদ্ধের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়। ১৮৩১ সালে বেলজিয়ামের রাজধানী হিসেবে ব্রাসেলসের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির দখলে ছিল।
আন্তর্জাতিক গুরুত্ব:
ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং ন্যাটোর (NATO) মূল কার্যালয় অবস্থিত, যা একে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র করে তুলেছে। এছাড়াও ব্রাসেলসের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জাদুঘর, গবেষণা কেন্দ্র, বিভিন্ন শিল্প ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে সমৃদ্ধ। ব্রাসেলস লেসফিতা, ট্যাপেস্ট্রি, কারুকার্য এবং চকোলেট এর জন্য বিখ্যাত।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
বেলজিয়ামের কেন্দ্রভাগে অবস্থিত ব্রাসেলসের জনসংখ্যা প্রায় ১২ লক্ষ। এটি ফরাসি ও ওলন্দাজ ভাষাভাষী অঞ্চলের সংযোগস্থলে অবস্থিত।
অর্থনীতি:
ব্রাসেলস বেলজিয়ামের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সরকারি চাকরি, শিল্প, পরিবহন ও পর্যটন এই শহরের প্রধান অর্থনৈতিক উৎস।
সারসংক্ষেপ:
ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বে সমৃদ্ধ ব্রাসেলস ইউরোপের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। এর সৌন্দর্য, সংস্কৃতি ও আন্তর্জাতিক মর্যাদা একে বিশ্বের মানচিত্রে সুস্থিত করেছে।