বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালের শেষের দিকে এটি ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা সাত বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ। ঋণের বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণ, বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। অর্থনীতিবিদরা বারবার এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন।
বাংলাদেশ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দেশের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে। দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় জাপান, চীন, রাশিয়া এবং ভারত থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ঋণ গ্রহণ করেছে। ২০১৭ সালের শেষে বাংলাদেশের মোট ঋণ ছিল ৫১.১৪ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩ সালের শেষের দিকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০.৬৩ বিলিয়ন ডলারে।
বৈদেশিক ঋণের বৃদ্ধির সাথে সাথে সুদ ও আসল পরিশোধের বোঝাও বেড়ে চলেছে। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন যে, ভবিষ্যতে ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও চাপের মুখে পড়তে পারে। রাজস্ব আহরণ, রপ্তানি বাণিজ্য, ডলার সংকট এবং রিজার্ভের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে তারা এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন এবং পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ. মনসুর ঋণ পরিশোধ এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনার প্রতি সতর্কতা অবলম্বন করার উপর জোর দিয়েছেন। তারা উল্লেখ করেছেন যে, ঋণের বেশিরভাগই সরকারের, এবং ঋণ পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ অনেক বেশি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক ঋণ ছিল ৫৫.৬০ বিলিয়ন ডলার, এর অর্ধেকের বেশি বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের কাছে।
বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য, যেমন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে ইত্যাদি বাইরে থেকে অর্থ আনতে বাধ্য, যা দুশ্চিন্তার বিষয়।
সরকার জানিয়েছে যে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ কখনো বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। তবে অর্থনীতিবিদরা ঋণের ঝুঁকি এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। তারা রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং বিদেশে অর্থ পাচার রোধের উপর জোর দিচ্ছেন।
শেষ পর্যন্ত বিদেশি ঋণের সমস্ত দায় জনগণের কাঁধে পড়বে। সরকার কর আদায়ের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করবে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ২ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা, যার এক লক্ষ কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়নের পরিকল্পনা আছে।