বেগমগঞ্জ উপজেলা, নোয়াখালী: একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস ও বর্তমানের সমন্বয়
বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত বেগমগঞ্জ উপজেলা, ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও আধুনিক উন্নয়নের এক অপূর্ব সমন্বয়। একসময় জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের বৃহত্তম উপজেলা হিসেবে পরিচিত ছিল। ২২°৫২´ থেকে ২৩°০৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৯´ থেকে ৯১°১৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে অবস্থিত বেগমগঞ্জ উপজেলার উত্তরে সোনাইমুড়ি ও চাটখিল, দক্ষিণে নোয়াখালী সদর, কবিরহাট ও সেনবাগ, পূর্বে সেনবাগ এবং পশ্চিমে চাটখিল ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা অবস্থিত।
ইতিহাসের স্পর্শ:
১৮৯২ সালে বেগমগঞ্জ থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পরবর্তীতে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। মোগল আমলের গোপালপুর চৌধুরী বাড়ির মসজিদ এর প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন বহন করে। ১৯৪৬ সালের ৭ নভেম্বর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে শান্তি মিশনে মহাত্মা গান্ধী বেগমগঞ্জ উপজেলা পরিদর্শন করেন। মুক্তিযুদ্ধেও উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে; চৌমুহনী-লক্ষ্মীপুর সড়কে এবং চন্দ্রগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণের মত ঘটনা এ ইতিহাসের অংশ।
অর্থনীতি ও উন্নয়ন:
বেগমগঞ্জের অর্থনীতি কৃষি, শিল্প ও ব্যবসায় নির্ভরশীল। চৌমুহনী নামক উপজেলা শহর বৃহত্তর নোয়াখালীর বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এখানে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বইয়ের বাজার, তেল কল, মুড়ি কারখানা, রাইস মিল, ডেল্টা জুট মিল, গ্লোব ফার্মাসিউটিকালস, গ্লোব সফট ড্রিংকস, বিসিক শিল্প নগরীসহ অনেক বৃহৎ ও মাঝারি শিল্প কারখানা রয়েছে।
জনসংখ্যা ও প্রশাসন:
বেগমগঞ্জ উপজেলার আয়তন ২৩৮.৩৭ বর্গ কিমি এবং জনসংখ্যা প্রায় ৫৪৯,৩০৮। এখানে ১টি পৌরসভা ও ১৬টি ইউনিয়ন রয়েছে। শিক্ষার হার ৫৯.৩%। উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ:
ডাকাতিয়া নদী ও ওয়াপদা খাল বেগমগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ জলাশয়। প্রাকৃতিক গ্যাসও এখানে পাওয়া যায়। তবে অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি একটি উদ্বেগের বিষয়।
উপসংহার:
বেগমগঞ্জ উপজেলা, নোয়াখালী, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং প্রকৃতির এক অনন্য সমন্বয়। এর উন্নয়নে ভবিষ্যতে আরও গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন।