বৃষ্টিপাত: জীবনদাতা বৃষ্টির গুরুত্ব ও কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের প্রযুক্তি
পৃথিবীর জীবনচক্রে বৃষ্টিপাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আকাশ থেকে নেমে আসা এই তরল জলই পৃথিবীর সকল প্রাণের জন্য জীবনধারণের মূল উপাদান। কৃষিকাজ, শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, এমনকি আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও বৃষ্টির অবদান অপরিসীম। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন, যা ঋতু, ভৌগোলিক অবস্থান এবং জলবায়ুর উপর নির্ভর করে।
বৃষ্টিপাতের পরিমাপ:
বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মিলিমিটারে মাপা হয়। বৃষ্টির তীব্রতা অনুযায়ী, হালকা, মাঝারি, ভারি এবং অতিভারী বৃষ্টিপাত হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। ঘণ্টায় ০.২৫ মিলিমিটার থেকে ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতকে হালকা, ৪ মিলিমিটার থেকে ১৬ মিলিমিটারকে মাঝারি, ১৬ মিলিমিটার থেকে ৫০ মিলিমিটারকে ভারি এবং ৫০ মিলিমিটারের বেশিকে অতিভারী বৃষ্টিপাত বলা হয়।
কৃত্রিম বৃষ্টিপাত:
প্রকৃতির নিয়মিত বৃষ্টিপাত যথেষ্ট না হলে, কৃত্রিম পদ্ধতিতে বৃষ্টি ঝরানোর চেষ্টা করা হয়। কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। এতে মেঘের ভেতরে জলীয় বাষ্পকে ঘনীভূত করে বৃষ্টি ঝরানো হয়। এই কাজে বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ যেমন, সিলভার আয়োডাইড ব্যবহার করা হয়। এই রাসায়নিক পদার্থকে বিমান বা রকেটের মাধ্যমে মেঘের ভেতরে ছিটানো হয়। উষ্ণ অঞ্চলে ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড ব্যবহার করা হয়।
মার্কিন বিজ্ঞানী ভিনসেন্ট শায়েফার প্রথম কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের ধারণা দিয়েছিলেন। তিনি ড্রাই আইস (শুষ্ক বরফ) ব্যবহার করে তুলোর মতো মেঘ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
চীন কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। তারা উত্তর চীনের শুষ্ক অঞ্চলে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে নদ-নদীর পানির প্রবাহ বৃদ্ধি করেছে। ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকের সময় বৃষ্টি রোধেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল।
যদিও কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের ফলে অনেক সুফল পাওয়া যায়, তবে এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। এটি পরিবেশের উপর কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য কারণ হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।
বাংলাদেশের বৃষ্টিপাত:
বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত মূলত মৌসুমি বায়ুর উপর নির্ভর করে। বর্ষা মৌসুমে (জুন-অক্টোবর) দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টি হয়। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি। লালাখাল (জৈন্তিয়াপুর) বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের স্থান। শীতকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম থাকে।
উপসংহার:
বৃষ্টিপাত জীবনের জন্য অপরিহার্য। প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের প্রযুক্তি মানুষের কাজে লাগছে। তবে এই প্রযুক্তির ব্যবহার পরিবেশের উপর প্রভাব বিবেচনা করে সাবধানতার সাথে করা উচিত।