দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বুসান (부산, 釜山): একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন
বুসান (কোরিয়ান উচ্চারণ: [Pusan]), আনুষ্ঠানিকভাবে বুসান মেট্রোপলিটন সিটি, দক্ষিণ কোরিয়ার সিওলের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। ২০২৪ সালের হিসাবে এর জনসংখ্যা ৩.৬ মিলিয়নেরও বেশি। কোরিয়ান উপদ্বীপের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এই শহর দক্ষিণ-পূর্ব অর্থনৈতিক অঞ্চলের (বুসান, উলসান, দক্ষিণ গিয়ংসাঙ প্রদেশ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত) সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু। বুসান বিশ্বের পঞ্চম ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দর হিসেবে বিখ্যাত।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
বুসান কোরিয়ান উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। উত্তর ও পশ্চিমে পাহাড় ও দক্ষিণ ও পূর্বে সমুদ্রবেষ্টিত। নকডং নদী (কোরিয়ার দীর্ঘতম নদী) পশ্চিম দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কোরিয়া প্রণালীতে মিশেছে। হেউন্দে বীচ, কোরিয়ার বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত, বুসানে অবস্থিত। বুসান মেট্রোপলিটন এলাকার জনসংখ্যা প্রায় ৪.৬ মিলিয়ন। শহরটি ১৫টি প্রধান প্রশাসনিক জেলায় বিভক্ত।
অর্থনীতি ও শিল্প:
বুসানের অর্থনীতি বন্দর, শিল্প ও পরিষেবা খাতের ওপর নির্ভরশীল। দেশের বৃহত্তম শিল্প এলাকা এই অঞ্চলে অবস্থিত। ২০২০ সালে বুসান বন্দর ২১.৮১ মিলিয়ন টিইউ কন্টেইনার মালামাল পরিবহন করেছে। সমুদ্র বিজ্ঞান ও গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে বুসানের গুরুত্ব অপরিসীম। কোরিয়া মেরিটাইম ইন্সটিটিউট (KMI), কোরিয়া ইন্সটিটিউট অব ওশান সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (KIOST) সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এখানে অবস্থিত। বুসান আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও প্রদর্শনী শহর হিসাবেও পরিচিত।
ঐতিহাসিক ঘটনা:
বুসানের ইতিহাস প্রাচীনকাল থেকেই সমৃদ্ধ। কোচিলসান-গক নামে একটি প্রাচীন রাজ্য এই অঞ্চলে বিদ্যমান ছিল। সিল্লা রাজবংশের অধীনে এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। গোরিও যুগে এটির গুরুত্ব আরও বেড়েছে। ১৫৯২-৯৮ সালে জাপানি আক্রমণের সময় বুসান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ১৮৭৬ সালে বুসান কোরিয়ার প্রথম আন্তর্জাতিক বন্দর হিসেবে স্বীকৃতি পায়। কোরিয়ান যুদ্ধকালে এটি দক্ষিণ কোরিয়ার অবলম্বন ছিল।
পর্যটন ও সংস্কৃতি:
বুসান অনেক পর্যটন আকর্ষণের জন্য বিখ্যাত। হেউন্দে বীচ, গোয়ালি বীচ, ডাডাইপো বীচ, সোংডো বীচ, গামচিওন সংস্কৃতি গ্রাম, ইলগুয়াং বীচ সহ অসংখ্য সৈকত ও পর্যটন স্থল বুসানের আকর্ষণ বাড়িয়েছে। বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (BIFF) এশিয়ার অন্যতম প্রধান চলচ্চিত্র উৎসব হিসেবে স্বীকৃত। বুসানে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য মন্দির এবং প্রাকৃতিক স্থান রয়েছে।
বুসানের উল্লেখযোগ্য দিক:
- বিশ্বের পঞ্চম ব্যস্ততম সমুদ্র বন্দর।
- কোরিয়ার বৃহত্তম শিল্প এলাকা।
- এশিয়ার অন্যতম প্রধান চলচ্চিত্র উৎসব।
- প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
- সুন্দর সৈকত এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
- গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র।