পণ্ডিত বিরজু মহারাজ (৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৮ - ১৬ জানুয়ারি ২০২২) ভারতের একজন বিখ্যাত কথক নৃত্যশিল্পী ছিলেন। তিনি লক্ষ্ণৌর কালকা-বিন্দাদিন ঘরাণার অন্যতম প্রধান শিল্পী ছিলেন এবং কথক নৃত্যের জন্য পরিচিত ‘মহারাজ’ পরিবারের সদস্য ছিলেন। তার পরিবারে অন্যান্য প্রখ্যাত শিল্পীরা ছিলেন তার দুই পিতৃব্য শম্ভু মহারাজ এবং লাচ্চু মহারাজ এবং পিতা ও গুরু অচ্ছন মহারাজ। নৃত্য ছাড়াও ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের উপর তাঁর দারুণ দখল ছিল এবং কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও তিনি সুনাম অর্জন করেছিলেন।
বিরজু মহারাজ তার কাকা শম্ভু মহারাজের সাথে ভারতীয় কলা কেন্দ্র, পরবর্তীতে কথক কেন্দ্র, নয়াদিল্লিতে কাজ করার পর কথক কেন্দ্রের প্রধান ছিলেন বেশ কিছু বছর। ১৯৯৮ সালে অবসর নেওয়ার পর তিনি নিজের নাচের স্কুল, কলাশ্রম, দিল্লিতে প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি ১৯৮৬ সালে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান পদ্মবিভূষণে ভূষিত হন। তার জন্ম ১৯৩৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ইলাহাবাদ জেলার হান্ডিয়ায় হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে। তার পিতা কথক শিল্পী জগন্নাথ মহারাজ (অচ্ছন মহারাজ নামেও পরিচিত) ছিলেন। রায়গড় রাজ্যের রাজদরবারের নৃত্যশিল্পী ছিলেন তিনি। চার বছর বয়সে বিরজু মহারাজ নৃত্য শিখতে শুরু করেন এবং তার কাকা, পিতা এবং গুরুর কাছে প্রশিক্ষণ নেন। সাত বছর বয়সে পশ্চিমবঙ্গে তিনি তার একক নৃত্য পরিবেশন করেন। নয় বছর বয়সে তার পিতার মৃত্যু হয়।
তিনি তেরো বছর বয়সে নয়াদিল্লিতে সংগীত ভারতীতে নৃত্য শেখাতে শুরু করেন এবং পরে ভারতীয় কলা কেন্দ্র এবং কথক কেন্দ্রে (সংগীত নাটক অ্যাকাডেমীর একটি ইউনিট) শিক্ষক ও পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। তিনি কথক নৃত্যের পাশাপাশি হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীত এবং বাদ্যযন্ত্রের জ্ঞান রাখতেন। তিনি ঠুমরি গান গেয়ে কথক নৃত্য পরিবেশন করতে পারতেন এবং তবলা ও ঢোলক বাজাতে পারতেন। তার কথক নৃত্যে পৌরাণিক গল্পের পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবন এবং সামাজিক বিষয়গুলিও তুলে ধরা হত।
বিরজু মহারাজ অনেক ভারতীয় চলচ্চিত্রের জন্য নৃত্য পরিচালনা ও সঙ্গীত রচনা করেছিলেন। তিনি সত্যজিৎ রায়ের 'শতরঞ্জ কে খিলাড়ী' (১৯৭৭), 'দিল তো পাগল হ্যায়' (১৯৯৭), 'দেবদাস' (২০০২), 'দেড় ইশকিয়া' (২০১৪), 'বিশ্বরূপম' (২০১২), 'বাজিরাও মস্তানি' (২০১৫) এবং 'কলঙ্ক' (২০১৯) ছবিতে নৃত্য পরিচালনা করেছেন। 'বিশ্বরূপম' ছবির নৃত্য পরিচালনার জন্য তিনি ২০০২ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার এবং 'বাজিরাও মস্তানি' ছবির জন্য ২০১৬ সালে ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার লাভ করেন।
অষ্টাবিংশ বছর বয়সে তিনি সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরষ্কার লাভ করেন। তিনি বিবাহিত ছিলেন এবং পাঁচ সন্তান (দুই পুত্র এবং তিন কন্যা) ছিলেন। বৃদ্ধ বয়সে তিনি কিডনি রোগ ও ডায়াবেটিসে ভোগেন এবং ডায়ালিসিস করতেন। তিনি ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি দিল্লিতে ৮৩ বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাকের ফলে মারা যান।