বিচারপতি হাবিবুর রহমান

আপডেট: ৫ জানুয়ারী ২০২৫, ৪:৪৭ এএম

বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান: একজন বহুমুখী ব্যক্তিত্ব

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ইতিহাসে বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান (৩ ডিসেম্বর ১৯২৮ - ১১ জানুয়ারি ২০১৪) একজন অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন একজন বিচারক, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, লেখক, রবীন্দ্র গবেষক এবং ভাষা সৈনিক। তাঁর জীবন ও কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা:

১৯২৮ সালের ৩ ডিসেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গীপুর মহকুমার দয়ারামপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা মৌলভী জহিরউদ্দিন বিশ্বাস ছিলেন একজন আইনজীবী এবং রাজনীতিতেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতেন। জঙ্গীপুর হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আই.এ পাশ করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫০ সালে ইতিহাসে বি.এ (অনার্স) এবং ১৯৫১ সালে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.এল.বি ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উরস্টার কলেজ থেকে আধুনিক ইতিহাসে বি.এ (অনার্স) এবং এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৯ সালে লিঙ্কনস ইন থেকে বার-এট-ল সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবন:

১৯৫২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের লেকচারার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডীন ও ইতিহাস বিভাগের রিডারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ সালে আইন পেশায় নিয়োজিত হন এবং ঢাকা হাইকোর্টে আইন অনুশীলন শুরু করেন। তিনি সহকারী অ্যাডভোকেট জেনারেল, হাইকোর্ট আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্যের দায়িত্বও পালন করেন।

বিচারক ও প্রধান বিচারপতি:

১৯৭৬ সালে তিনি হাইকোর্টের বিচারপতি পদে নিয়োগ লাভ করেন এবং পরে ১৯৮৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি নিযুক্ত হন। ১৯৯০-৯১ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি অ্যাডমিরাল্টি জুরিস্ডিকশন, সংবিধান সংশোধনী, নাগরিকত্ব, হেবিয়াস কর্পাস, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল এবং কোর্টের এখতিয়ার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বহু রায় প্রদান করেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা:

১৯৯৫ সালে প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবসর গ্রহণের পর ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য তিনি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একটি কঠিন রাজনৈতিক সময়ে দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

লেখক ও গবেষক:

বিচারপতি হাবিবুর রহমান একজন মননশীল লেখকও ছিলেন। আইন, সাহিত্য, রাজনীতি, ধর্ম ও সমাজ বিষয়ক অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘যথাশব্দ’, ‘মাতৃভাষার সপক্ষে রবীন্দ্রনাথ’, ‘কোরানসূত্র’, ‘বচন ও প্রবচন’ ইত্যাদি। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যের উপর গবেষণা করে বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন।

সম্মাননা ও পুরস্কার:

তিনি ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার এবং ২০০৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির ফেলো, বাংলা একাডেমীর ফেলো, লিংকন্স ইন-এর অনারারি বেঞ্চার এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উরস্টার কলেজের অনারারি ফেলো ছিলেন।

মৃত্যু:

২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি ঢাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

বিচারপতি হাবিবুর রহমান (১৯২৮-২০১৪)

• ১৯২৮ সালে জন্ম, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ

• ঢাকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা

• ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি

• ১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা

• বাংলা একাডেমী পুরস্কার ও একুশে পদক প্রাপ্তি

• অসংখ্য গ্রন্থ রচনা

• ২০১৪ সালে মৃত্যু

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯২৮ সালে জন্মগ্রহণ
  • ঢাকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা লাভ
  • ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত
  • ১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা
  • বাংলা একাডেমী পুরস্কার ও একুশে পদক প্রাপ্ত
  • অসংখ্য গ্রন্থ রচনা
  • ২০১৪ সালে মৃত্যুবরণ

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।