বাংলাদেশের জলসীমা

আপডেট: ৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৫০ পিএম

বাংলাদেশের জলসীমা: একটি বিশ্লেষণ

বাংলাদেশ, বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত একটি দক্ষিণ এশীয় দেশ। এর জলসীমা দেশের অর্থনীতি, ভূরাজনীতি এবং পরিবেশের সাথে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই নিবন্ধে, আমরা বাংলাদেশের জলসীমা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

রাষ্ট্রীয় জলসীমা ও আন্তর্জাতিক আইন:

১৯৭৪ সালের রাষ্ট্রীয় জলসীমা ও সামুদ্রিক এলাকা বিধি অনুসারে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সমুদ্র জলসীমা ১২ নটিক্যাল মাইল এবং একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল (EEZ) ২০০ নটিক্যাল মাইল। এই সীমানা নির্ধারণে ১৯৮২ সালের সমুদ্র আইন বিষয়ক জাতিসংঘ কনভেনশন (UNCLOS) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে, বাংলাদেশ UNCLOS এ স্বাক্ষর করেছে যদিও এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করেনি।

ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও সমস্যা:

বাংলাদেশের উপকূলীয় রেখা বাঁকা, খাজকাটা এবং অস্থিতিশীল। পদ্মা, গঙ্গা, এবং ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে প্রচুর পলি, কাদা ও নুড়ি জমা হওয়ায় মগ্ন চড়া দেখা দিচ্ছে, যার ফলে বড় জাহাজ চলাচলের জন্য সমুদ্র এলাকা অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। কাদাভরা তীরের মধ্যে নাব্য জলপথের অবিরত পরিবর্তন জরিপের প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে তুলেছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় সমুদ্রের মতো সামুদ্রিক এলাকা পরিমাপে সমুদ্রপৃষ্ঠের ১০ ফ্যাদম গভীরতার প্রস্তাব দিয়েছে।

সীমান্ত বিরোধ:

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী হাড়িভাঙ্গা নদীর মোহনায় এবং রাইমঙ্গল নদীর মোহনায় দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ (ভারতে নিউ মুর হিসাবে পরিচিত) উঠে আসার ফলে যৌথ-জরিপের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। দ্বীপটির মালিকানা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হয়, কিন্তু মহীসোপান নিয়ে বিরোধ চলছে। ২০২১ সালে ভারত বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশের মহীসোপান দাবির বিষয়ে আপত্তি উত্থাপন করেছিল।

মহীসোপান:

বাংলাদেশের মহীসোপান বলতে বঙ্গোপসাগরে পানিতে নিমজ্জিত ভূভাগ বোঝায়। এই মহীসোপানের বিস্তার স্থানভেদে পরিবর্তনশীল; কক্সবাজার উপকূলে ২৫০ কিলোমিটারের বেশি, এবং দক্ষিণ উপকূলে ১০০ কিলোমিটারের কম। মহীসোপান এলাকার সামুদ্রিক সম্পদের মালিকানা বাংলাদেশের।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব:

২০১৪ সালের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের ফলে বাংলাদেশ ১,১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চল এবং মহীসোপানে অবস্থিত সকল সম্পদের ওপর মালিকানা অর্জন করে। এই সম্পদে মৎস্য, তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ এবং অন্যান্য জৈবিক সম্পদ রয়েছে।

উপসংহার:

বাংলাদেশের জলসীমা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জাতীয় নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সীমান্ত বিরোধ এবং ভৌগোলিক জটিলতা সত্ত্বেও, সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ এই সম্পদ থেকে সর্বাধিক লাভ অর্জন করতে পারে। এ বিষয়ে আরও তথ্য পাওয়া গেলে আমরা এই নিবন্ধটি আরও সমৃদ্ধ করব।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সমুদ্র জলসীমা ১২ নটিক্যাল মাইল এবং একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল ২০০ নটিক্যাল মাইল নির্ধারিত হয়।
  • উপকূলীয় রেখার অস্থিতিশীলতা এবং পলি জমার কারণে জরিপ ও সীমানা নির্ধারণে চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
  • বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের মালিকানা নিয়ে বিরোধ বিদ্যমান।
  • ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হলেও মহীসোপান নিয়ে বিরোধ চলছে।
  • মহীসোপানে বিপুল সম্পদের সম্ভাবনা রয়েছে যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - বাংলাদেশের জলসীমা

১ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের জলসীমায় ৯৫ জন ভারতীয় মৎস্যজীবী আটক হয়।