ফয়ছল হোসেন চৌধুরী: এক প্রবাসী বাঙালির অসাধারণ সাফল্যের গাঁথা
ফয়ছল হোসেন চৌধুরী, একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্যক্তি, যিনি স্কটল্যান্ডের ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশী সংসদ সদস্য হিসেবে নাম লিখিয়েছেন। তার এই অসাধারণ সাফল্য শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নয়, বাংলাদেশের ইতিহাসেও একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যোগ করেছে। তার জীবনের সংগ্রাম, সাফল্য ও অর্জন শুধু তাকে নয়, সমগ্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে।
শৈশব ও পারিবারিক পটভূমি:
ফয়ছল হোসেন চৌধুরীর জন্ম হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বদরদী গ্রামে। ১৯৭০ সালের ৫ জানুয়ারী তিনি এক ঐতিহ্যবাহী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার সামাজিক উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক কাজে সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। তার দাদা মরহুম শামসুল আলম চৌধুরী এবং বাবা মরহুম গোলাম রাব্বানী চৌধুরী স্থানীয় সমাজে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। পরিবারের এই সমাজসেবায় নিয়োজিত থাকার শিক্ষাই ফয়ছল চৌধুরীকে বৃহৎ সমাজসেবী ও নেতা হিসেবে গড়ে তুলেছে।
প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন হবিগঞ্জের রামচরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর, তার পরিবার যুক্তরাজ্যে চলে যায়।
যুক্তরাজ্যে প্রবাসী জীবন এবং শিক্ষা:
যুক্তরাজ্যে এসে ফয়ছল চৌধুরী স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় বসতি স্থাপন করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি ক্যাটারিং ব্যবসায় জড়িত হন। বাবার অসুস্থতা ও বড় ছেলে হিসেবে পরিবারের দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি পরিবারের ব্যবসার ভার বহন করেন। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে তিনি ব্যবসা ও নেতৃত্বের দক্ষতা অর্জন করেন। ব্যবসায় সাফল্যের পাশাপাশি তিনি স্কটল্যান্ডের বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।
রাজনীতিতে প্রবেশ:
২০১৭ সালে লেবার পার্টির সদস্য হিসেবে স্কটল্যান্ডের এডিনবরা সাউথইস্ট আসনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। যদিও তখন তিনি নির্বাচিত হননি, কিন্তু ২০২১ সালে স্কটিশ পার্লামেন্টের নির্বাচনে লোথিয়ান অঞ্চল থেকে স্কটিশ লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন। এই জয়ের মাধ্যমে তিনি স্কটল্যান্ডের ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশী এমএসপি হিসেবে নাম লেখান।
কমিউনিটি সেবা এবং সামাজিক কাজ:
ফয়ছল চৌধুরী একজন রাজনীতিবিদ ছাড়াও একজন সমাজসেবী। স্কটল্যান্ডে থাকাকালীন বিভিন্ন সামাজিক ও দাতব্য কাজে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। ২০১৪ সালের স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা গণভোটে “বাংলাদেশীজ ফর বেটার টুগেদার ক্যাম্পেইন” এর সমন্বয়কারী ছিলেন। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় এডিনবরায় দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য খাদ্য সরবরাহের কাজেও অংশগ্রহণ করেন। তার সামাজিক কাজ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
এমবিই খেতাব প্রাপ্তি:
সমাজসেবায় অবদানের জন্য ২০০৪ সালে ব্রিটিশ রাণীর কাছ থেকে এমবিই (মেম্বার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার) খেতাবে ভূষিত হন।
নেতৃত্ব এবং উদ্যোগ:
ফয়ছল চৌধুরী স্কটল্যান্ডে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি স্কটল্যান্ডের বাংলাদেশী যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান এবং শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
ব্যক্তিগত জীবন:
তিনি মির্জা তাহমিনা ফয়ছল চৌধুরী (মনি) -কে বিয়ে করেছেন। তাদের দুই সন্তান রয়েছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
তার লক্ষ্য হলো স্কটল্যান্ডে বাংলাদেশী সম্প্রদায়কে আরো শক্তিশালী করা এবং তাদের আন্তর্জাতিক ভূমিকা আরও সুসংহত করা।
উপসংহার:
ফয়ছল হোসেন চৌধুরী একজন আদর্শ সমাজসেবক এবং রাজনীতিবিদ। তার সংগ্রাম, সেবা ও অর্জন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে থাকবে।