ফেরদৌসী: একাধিক পরিচয়ের অধিকারী
"ফেরদৌসী" নামটি একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের সাথে যুক্ত হওয়ার কারণে কিছুটা দ্ব্যর্থবোধ্য। এই লেখায় আমরা ফেরদৌসী নামের দুইজন বিশিষ্ট ব্যক্তির জীবনী ও কাজ সম্পর্কে আলোচনা করব।
প্রথম ফেরদৌসী: হাকিম আবুল কাশেম ফেরদৌসী তুসি (৯৪০-১০২০ খ্রিস্টাব্দ), পারস্যের (বর্তমান ইরান) একজন বিখ্যাত কবি। তিনি বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সেরা মহাকাব্য ‘শাহনামা’ রচনা করে ইরানি সংস্কৃতির ধারক-বাহক হিসেবে পরিচিত। উত্তর-পূর্ব ইরানের তুস শহরের পাশে পাজ গ্রামে জন্মগ্রহণকারী ফেরদৌসী প্রায় ৩০ বছর ধরে (৯৭৭-১০১০) ‘শাহনামা’ রচনা করেন। মহাকাব্যটিতে ৯৯০টি অধ্যায় এবং ৬২টি কাহিনী রয়েছে। ৬০,০০০ লাইনের এই মহাকাব্য ইরানের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারণা দেয়। সামানীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর গজনবী সুলতান মাহমুদের পৃষ্ঠপোষকতায় কাজটি সম্পন্ন হয়। তবে মাহমুদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে ফেরদৌসীর জীবনের শেষের দিকে দুঃখ ও অভাবের সম্মুখীন হতে হয়।
দ্বিতীয় ফেরদৌসী: ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী (১৯৪৭-২০১৮), একজন বাংলাদেশী ভাস্কর ও মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৪৭ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারি খুলনায় জন্মগ্রহণকারী তিনি ফেলে দেয়া গাছের গুঁড়ি, শিকড়, ডাল ইত্যাদি দিয়ে ভাস্কর্য তৈরি করে নতুন ধারা সৃষ্টি করেন। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরও তিনি নতুন করে জীবন গড়ে তোলেন। ১৯৭২ সালে আহসান উল্লাহ আহমেদকে বিয়ে করেন। তিনি ইউএনডিপি, ইউনিসেফ, এফএও প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানেও কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৫ সালে শিল্পী এস.এম. সুলতানের প্রশংসা ও উৎসাহে তার শিল্পকর্মের একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। তিনি ১২টি একক প্রদর্শনীসহ অনেক যৌথ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। ২০০৮ সালে তিনি স্বাধীনতা পদক পান এবং ২০০৮ সালের ৬ই মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।
তৃতীয় ফেরদৌসী: ফেরদৌসী রহমান (জন্ম: ২৮ জুন ১৯৪১), একজন বাংলাদেশী কণ্ঠশিল্পী। প্রায় পাঁচ দশক ধরে সঙ্গীত জগতে অবদান রাখেন। পল্লীগীতি, রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি, আধুনিক গান সব ধরণের গানেই তার দক্ষতা ছিল। ১৯৯৫ সালে স্বাধীনতা পদক, ১৯৭৭ সালে একুশে পদক এবং ২০১৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন। ভারতের কোচবিহারে জন্মগ্রহণকারী এই গায়িকা বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দর্শকদের কাছে ‘খালামনি’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
উপসংহার: এই তিনজন ফেরদৌসীই তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রেখেছেন। তাদের জীবনী ও কাজ সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ।