ফিলিপাইন: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপরাজ্য
ফিলিপাইন (ফিলিপিনো: Pilipinas), সরকারিভাবে ফিলিপাইন প্রজাতন্ত্র (ফিলিপিনো: Repúbliká ng̃ Pilipinas) নামে পরিচিত, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত একটি দ্বীপপুঞ্জ রাষ্ট্র। এটি প্রায় ৭,৬৪১টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত, যাদের মোট আয়তন প্রায় ৩ লক্ষ বর্গকিলোমিটার (বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় দ্বিগুণ)। ভৌগোলিকভাবে দেশটিকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়: উত্তরের লুসোন, মধ্যের ভিসায়াস এবং দক্ষিণের মিন্দানাও। ফিলিপাইনের পশ্চিমে ও উত্তরে দক্ষিণ চীন সাগর, পূর্বে ফিলিপাইন সাগর এবং দক্ষিণে সেলিবিস সাগর অবস্থিত। দেশটির উত্তরে তাইওয়ান, উত্তর-পূর্বে জাপান, পূর্বে ও দক্ষিণ-পূর্বে পালাউ, দক্ষিণ-পশ্চিমে মালয়েশিয়া, পশ্চিমে ভিয়েতনাম এবং উত্তর-পশ্চিমে চীন অবস্থিত। লুসোন দ্বীপে অবস্থিত ম্যানিলা ফিলিপাইনের রাজধানী, এবং কেসোন সিটি সর্বাধিক জনবহুল শহর।
জনসংখ্যা ও সংস্কৃতি: ফিলিপাইনে প্রায় ১০ কোটি ১৯ লক্ষ মানুষ বাস করে, যা বিশ্বের ১২তম বৃহত্তম জনসংখ্যা। ফিলিপিনোরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয় উপদ্বীপ থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়। ১২০টিরও বেশি নৃগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে এখানে, যাদের বিভিন্ন ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতি রয়েছে। স্পেনীয়, মার্কিন এবং আদিবাসী ঐতিহ্যের মিশ্রণ ফিলিপাইনের সংস্কৃতিতে দেখা যায়। ফিলিপিনো (তাগালগ ভাষার একটি রূপ) ও ইংরেজি দেশের দুটি সরকারী ভাষা। সেবুয়ানো ও ইলোকানোও প্রচলিত ভাষা। ৮০% মানুষ রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান, এবং প্রায় ১০% মুসলমান (মূলত মিন্দানাও অঞ্চলে)।
ইতিহাস: আদিতে ফিলিপাইনে বিভিন্ন আদিবাসী উপজাতির (প্রায় ৫০,০০০ বছর আগে নেগ্রিতো, পরবর্তীতে অস্ট্রোনেশীয়) বাস ছিল। মালয় জাতির লোকেরা ২০০০ বছর আগে এখানে আসতে শুরু করে। পরে সর্বপ্রাণবাদ, হিন্দুধর্ম, ইসলাম এবং বৌদ্ধধর্মের প্রভাব পড়ে। ১৫৬৫ সালে স্পেনীয়রা ফিলিপাইন দখল করে এবং প্রায় ৩০০ বছর শাসন করে। ১৯শ শতকের শেষে ফিলিপিনোরা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম শুরু করে এবং ১৮৯৮ সালে স্পেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। কিন্তু পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইন দখল করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান ফিলিপাইন দখল করে। ১৯৪৬ সালে ফিলিপাইন স্বাধীন হয়। স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ (টাইফুন, জলবায়ু পরিবর্তন) দেশের সম্মুখীন হয়। ১৯৭২ সালে ফের্দিনান্দ মার্কোস সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা করেন যা ১৯৮৬ সালে জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে শেষ হয়।
অর্থনীতি: ফিলিপাইন একটি মিশ্র-অর্থনীতির উন্নয়নশীল দেশ এবং আসিয়ান এবং এপেকের সদস্য। দেশটিতে খনিজ, কাঠ ও মৎস্যসম্পদের প্রাচুর্য রয়েছে। চাল, ভুট্টা ও চিনির উৎপাদনও উল্লেখযোগ্য।
আরও তথ্যের জন্য: ফিলিপাইনের বিস্তারিত ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনীতি এবং রাজনীতি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে, আপনাকে বিভিন্ন বই, নিবন্ধ, এবং তথ্য সাইট দেখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আমরা অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ করছি এবং আপনাকে ভবিষ্যতে আপডেট দেব।