ফখরুল ইসলাম খান

আপডেট: ৫ জানুয়ারী ২০২৫, ৭:৪৫ এএম

ফখরুল ইসলাম খান: একজন ব্যক্তিত্বের বহুমুখী চিত্র

ফখরুল ইসলাম খান (৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৫ – ১৩ মে, ২০০৭) ছিলেন বাংলাদেশের একজন অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি একজন সম্পাদক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক সংগঠক, নাট্যকার, প্রযোজক এবং পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিকতা অঙ্গনে অমূল্য অবদান রেখে গেছেন।

তার জন্ম বরিশালে। পিতা খান বাহাদুর হাশেম আলী খান ছিলেন একজন সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ, যিনি ১৯৪১ সালে শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। ফখরুল ইসলাম খান প্রাথমিক শিক্ষা বরিশালের এ.কে. স্কুলে এবং উচ্চ শিক্ষা কলকাতার রিপন স্কুল ও কলেজে সম্পন্ন করেন। কলকাতায় থাকাকালীন তিনি বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং রিপন স্কুল ম্যাগাজিনের সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেন।

সাংবাদিকতা ছাড়াও ফখরুল ইসলাম খানের চলচ্চিত্রের সাথেও গভীর সম্পৃক্ততা ছিল। তিনি বাংলার মুসলিমদের মধ্যে প্রথম চলচ্চিত্র প্রযোজক ছিলেন। ১৯৪৪ সালে কলকাতা আজাদ চিত্রপট প্রযোজনা সংস্থার ব্যানারে 'পুর্বাশা', 'কালোছায়া', 'হানিবাড়ি' এবং 'জাগো হুয়া সাবেরা' চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। 'কালোছায়া' চলচ্চিত্রের যুগ্ম পরিচালক ছিলেন তিনি। ১৯৪৭ সালে 'কালোছায়া' চলচ্চিত্র শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরষ্কার লাভ করে। ১৯৫৬ সালে 'বুলবুল প্রোডাকশনের' ব্যানারে তিনি 'হাসপাতাল' নামে আরও একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন। এছাড়াও ১৯৭২ সালে ভারতের সাথে যৌথ উদ্যোগে 'অনন্যা' চলচ্চিত্রের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তিনি 'কলকাতা মোশন পিকচারস এসোসিয়েশন' এবং 'কলকাতা লেখক সাংবাদিক সংঘ'-র যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।

সাংবাদিকতা ও চলচ্চিত্রের পাশাপাশি ফখরুল ইসলাম খান বরিশালের সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক অঙ্গনেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তিনি ১৯৬৪ সালে বরিশাল নাট্য নিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন এবং বরিশাল সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫০ সালে বরিশাল থেকে প্রকাশিত মাসিক 'গুলিস্তা' এবং ১৯৬৬ সালে সাপ্তাহিক 'খাদেম' পত্রিকার সম্পাদনা করেন। কলকাতা থেকে প্রকাশিত 'ইনকিলাব' পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমানের সাথে। বরিশালের নাট্যাঙ্গন, সাংস্কৃতিক অঙ্গন এবং বরিশাল প্রেস ক্লাবের কার্যক্রমে তার অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

কলকাতা সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং ভারতীয় সংসদ সদস্য সৈয়দ বদরুদ্দোজার কন্যা সৈয়দা সাকিনা ইসলামকে বিয়ে করেন ফখরুল ইসলাম খান। তাদের এক পুত্র আমিরুল ইসলাম খান বুলবুল এবং দুই কন্যা ছিলেন। তার স্ত্রী দুইবার বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার প্যানেলেও সদস্য ছিলেন।

মূল তথ্যাবলী:

  • ফখরুল ইসলাম খান (৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৫ – ১৩ মে, ২০০৭) একজন সম্পাদক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক সংগঠক, নাট্যকার, প্রযোজক ও পরিচালক ছিলেন।
  • তিনি বাংলার মুসলিমদের মধ্যে প্রথম চলচ্চিত্র প্রযোজক ছিলেন।
  • বরিশাল নাট্য নিকেতন ও বরিশাল সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠায় তার অবদান বিশেষ।
  • মাসিক 'গুলিস্তা', সাপ্তাহিক 'খাদেম' ও 'ইনকিলাব' পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।
  • তার স্ত্রী সৈয়দা সাকিনা ইসলাম দুইবার বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।