প্রেম: এক অমৃতময় অনুভূতি, এক আবেগের সাগর। এই অনুভূতি কেবলমাত্র মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, প্রকৃতির কোণে কোণে এর ছায়া দেখা যায়। তবে আধুনিক যুগে, পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব এবং উপন্যাস, কবিতা, গানের মাধ্যমে প্রেমের একটি আদর্শ গড়ে উঠেছে। এই আদর্শকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে রোমান্টিক প্রেমের ধারণা। এই লেখাটিতে আমরা বিভিন্ন দার্শনিক, নৃতত্ত্ববিদ এবং মনোবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রেমের বিশ্লেষণ করব।
নৃতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে, ক্লদ লেভি-স্ট্রস, লুইস এইচ. মরগান, মার্গারেট মিড, ব্রোনিস্লা ম্যালিনোস্কি প্রমুখের গবেষণা থেকে জানা যায়, আদিম সমাজে প্রেমের ধারণা আধুনিক রোমান্টিক প্রেমের মত ছিল না। বিবাহ প্রায়শই সাজানো হত, তবে স্নেহের মূল্য ছিল। বরিস শিপভের 'থিওরি অফ রোমান্টিক লাভ' এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য রাখে। পলিনেশিয়ার মাঙ্গাইয়া দ্বীপের আদিবাসীদের ক্ষেত্রে, 'প্রেম' শব্দটির অর্থ আধুনিক ধারণা থেকে ভিন্ন ছিল বলে ডোনাল্ড এস. মার্শাল উল্লেখ করেছেন।
মধ্যযুগে দরবারী প্রেমের ধারণা উদ্ভব হয়। নাইটদের উচ্চমর্যাদার মহিলাদের প্রতি আদর্শবাদী আকর্ষণ, একটি নৈতিক আচরণবিধির অংশ ছিল। এই ধারণা ট্রুবাদুরদের কাব্য ও সাহিত্যে প্রতিফলিত হয়। আধুনিক দার্শনিকদের মধ্যে, শোপেনহাওয়ার, হিউম, রুসো, ডেলিউজ প্রমুখ প্রেমকে নৈতিকতা, ইচ্ছা, আবেগের দিক থেকে বিশ্লেষণ করেছেন। রেনে গিরার্ড ঈর্ষা ও প্রতিযোগিতার উপর জোর দিয়েছেন। শেক্সপিয়রের নাটকগুলোতে প্রেমের প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ দেখা যায়।
মনোবিজ্ঞানের দিক থেকে, ফ্রয়েড, হর্নি, বেসেল, স্টার্নবার্গ প্রমুখ প্রেমের বিভিন্ন মডেল উপস্থাপন করেছেন। হেলেন ফিশার মস্তিষ্কের রাসায়নিক বিক্রিয়ার সাথে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। লিসা ডায়মন্ড যৌন আকাঙ্ক্ষা ও রোমান্টিক প্রেমের স্বাধীনতা উপর জোর দিয়েছেন। মার্টি হ্যাসেলটন প্রেমকে 'কমিটমেন্ট ডিভাইস' হিসেবে দেখেছেন। গবেষণায় জানা যায়, রোমান্টিক প্রেম প্রায় এক বছর স্থায়ী হয়, এরপর 'সঙ্গী প্রেম' থেকে প্রতিস্থাপিত হয়। আবেগপূর্ণ প্রেম ও সহচরী প্রেমের ভেদাভেদ ও উল্লেখযোগ্য। ড্যানিয়েল ক্যানারি সম্পর্ক রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন।
অতএব, প্রেম একটি জটিল অনুভূতি যা জৈবিক, মানসিক, সামাজিক ও সংস্কৃতিক কারণের মিশ্রণ। প্রেমের ধারণা কালের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে এবং আধুনিক যুগে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও ব্যক্তিগত অনুভূতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।