পি কে হালদার: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়
প্রশান্ত কুমার হালদার, অথবা পি কে হালদার নামটি বাংলাদেশের অর্থনীতির ইতিহাসে কলঙ্কের সঙ্গে জড়িত। একজন সাধারণ ব্যাংক কর্মকর্তা থেকে তিনি কীভাবে দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন, তার গল্প অবিশ্বাস্য ও চাঞ্চল্যকর। তিনি বাংলাদেশের চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পলাতক হয়েছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে ৩৪ টির বেশি মামলা করেছিল। তাকে “সুইন্ডেলের সুলতান” বলে অভিহিত করা হয়েছে।
- *প্রাথমিক জীবন ও কর্মজীবন:**
পিরোজপুরের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণকারী পি কে হালদারের বাবা ছিলেন গ্রামের একজন দর্জি। তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক (পরে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন।
- *অর্থ আত্মসাতের কৌশল:**
পি কে হালদার অস্তিত্বহীন ৩০-৪০টি প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে পিঅ্যান্ডএল অ্যাগ্রো, পিঅ্যান্ডএল ইন্টারন্যাশনাল, পিঅ্যান্ডএল ভেঞ্চার, হাল ট্রাভেল, হাল ইন্টারন্যাশনাল, সুখাদা লিমিটেড, আনন কেমিক্যাল, নর্দার্ন জুট প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তিনি ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড এবং রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড থেকেও বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন।
- *পলাতক জীবন ও গ্রেফতার:**
২০১৯ সালের শেষভাগ থেকে পি কে হালদার পলাতক ছিলেন। ২০১৯ সালে ঢাকায় অবৈধ ক্যাসিনোতে অভিযানের পর তদন্ত শুরু হয়। ২০২০ সালের মার্চে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার এক ঘন্টা আগে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান, এবং পরে কানাডায় চলে যান। ২০২২ সালের মে মাসে ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
- *আর্থিক লেনদেন ও সম্পত্তি:**
তদন্তে উঠে এসেছে, পি কে হালদার ১৭৮টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকা লেনদেন করেছিলেন। তিনি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে জমি কিনেছিলেন, যার বাজারমূল্য ৩৯১ কোটি টাকার বেশি। তার নিকটাত্মীয়দের নামেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পত্তি ক্রয় করা হয়েছে। ভারতেও তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি অর্জন করেছিলেন।
- *সহযোগীরা:**
পি কে হালদারের অপরাধমূলক কার্যকলাপে অনেক সহযোগী জড়িত ছিল। স্বপন কুমার মিস্ত্রি, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, এনআই খান, প্রীতিশ কুমার সরকার, অমিতাভ অধিকারী, এবং উজ্জল কুমার নন্দী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
- *পি কে হালদারের ঘটনা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি কালো অধ্যায়। তার গ্রেফতার ও বিচারের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থের কিছুটা হলেও উদ্ধারের আশা রয়েছে।**