পুঁজিবাজারের অস্থিরতা

আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:৫৪ এএম

২০২৪ সাল: পুঁজিবাজারের অস্থিরতা ও বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা

দেশের পুঁজিবাজার ২০২৪ সালে অস্থিরতার মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ, প্রতিবাদ এবং বাজার স্থিতিশীলতায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর দরপতন, আর্থিক কেলেঙ্কারি এবং নীতিগত পরিবর্তনের ছোঁয়ায় এই বছরটি বিনিয়োগকারীদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলামের মতে, বছরের শুরুতে পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইসের ধকল গেছে। নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পরিস্থিতি বদলের আশা থাকলেও ইতিবাচক সাড়া নেই। পুঁজিবাজারে মৌলিক পরিবর্তন নেই। সুশাসনের দিক থেকেও ভালো কিছু দেখা যাচ্ছে না। পুঁজিবাজার নিয়ে রোডম্যাপ নেই।

বছরজুড়ে যা ঘটেছে

পুঁজিবাজারের দরপতন ঠেকাতে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি। চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি থেকে কয়েক দফায় ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হয়। এরপরই দরপতন শুরু হয়। ধারাবাহিক দরপতনের কারণে প্রায় সোয়া ১ লাখ কোটি টাকা বাজার মূলধন কমেছে।

তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের শেষ কর্মদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৮০ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা, যা ২০২৪ সালের শেষে কমে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬২ হাজার ৬১৯ কোটি টাকায়। এক বছরের ব্যবধানে ডিএসই বাজার মূলধন হারিয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা।

আগের বছরের শেষ কর্মদিবসে ডিএসইএক্স ছিল ৬ হাজার ২৪২ পয়েন্ট, যা ২০২৪ সালের শেষে কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২১৬ পয়েন্টে। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে সূচক কমেছে ১ হাজার ২৬ পয়েন্ট।

নতুন কমিশন গঠন

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম পদত্যাগ করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়োগে দায়িত্ব নেয় সাবেক ব্যাংকার খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন। পরিবর্তন করা হয়েছে দেশের উভয় পুঁজিবাজারের পরিচালনা পর্ষদও।

ধারাবাহিক দরপতনে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পর্যায়ে চলে আসেন বিনিয়োগকারীরা, যা নতুন কমিশনও ঠেকাতে পারেনি। বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে বারবার বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ, মানববন্ধন কর্মসূচি ও বিএসইসির ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

৭ অক্টোবর পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সংস্কারের সুপারিশের জন্য পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। টাস্কফোর্সের কাজ চলমান রয়েছে।

মন্দা আইপিও বাজার

২০২৪ সালে তিনটি প্রতিষ্ঠানের আইপিও আবেদন বাতিল করা হয়েছে। আইপিওতে শেয়ার বিক্রি করেছে এনআরবি ব্যাংক, বেস্ট হোল্ডিং, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ এবং টেকনো ড্রাগস। চারটি কোম্পানি মোট ৬৪৫ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। আগের দুই বছরে ১০টি কোম্পানি পুঁজিবাজারে এসেছিল। ২০২১ সালে ১৫টি কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে ১ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা উত্তোলন করেছিল।

আইপিও বাজারের দুর্দশার কারণ হিসেবে ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে যেভাবে আসতে চায়, সেভাবে আসতে পারছে না। প্রাইসিং মেথডের সমস্যা।

জরিমানার বছর

নতুন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর পুঁজিবাজারে ১২টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির কারণে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৭২২ কোটি টাকার জরিমানা করা হয়েছে, যা পুঁজিবাজারের ইতিহাসে কোনো একটি বছরের সর্বোচ্চ।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সংস্কারের উদ্দেশ্যে টাস্কফোর্স গঠনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কমিশন আশা করছে, আগামী বছরে এসব উদ্যোগের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে পুঁজিবাজারে।

মূল তথ্যাবলী:

  • ২০২৪ সালে পুঁজিবাজারে তীব্র অস্থিরতা বিরাজ করেছে।
  • ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর ব্যাপক দরপতন ঘটেছে।
  • বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা।
  • শেয়ার কারসাজির জন্য ৭২২ কোটি টাকার জরিমানা করা হয়েছে।
  • পুঁজিবাজার সংস্কারে টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছে।
  • আইপিও বাজারে মন্দা বিরাজ করছে।
  • বিএসইসিতে নতুন কমিশন গঠিত হয়েছে।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - পুঁজিবাজারের অস্থিরতা