সেলিনা পারভীন: একজন সাহসী সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতি
সেলিনা পারভীন (৩১ মার্চ, ১৯৩১ - ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১), একজন বাংলাদেশী সাংবাদিক, কবি এবং মুক্তিযুদ্ধের একজন অক্লান্ত কর্মী ছিলেন। তাঁর জন্ম নোয়াখালী জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ছোট কল্যাণনগরে। তিনি ফেনীর সরলা বালিকা বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। গ্রামীণ কুসংস্কার এবং পারিবারিক অবস্থার কারণে তাঁর পড়াশোনা অসম্পূর্ণ থাকে। ১৪ বছর বয়সে তাঁর অমতেই তাঁর বিয়ে হয়, কিন্তু এই বিবাহ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। পরে তিনি ঢাকা চলে আসেন এবং বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে মেট্রনের চাকুরি পান, কিন্তু কর্তৃপক্ষের সাথে মতবিরোধের কারণে তা ত্যাগ করেন।
সেলিনা পারভীনের সাংবাদিকতা জীবন শুরু হয় ‘ললনা’ পত্রিকা থেকে। তিনি ‘সাপ্তাহিক বেগম’ এবং ‘শিলালিপি’ পত্রিকাতেও সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। তিনি ‘শিলালিপি’ নামে একটি স্বাধীনতাকামী সাহিত্য পত্রিকাও প্রকাশ করেন। এই পত্রিকায় তৎকালীন অনেক বুদ্ধিজীবীর লেখা প্রকাশিত হত, যা তাকে পাকিস্তানী সরকারের কাছে সন্দেহের চোখে দেখার কারণ হয়। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের সময় সেলিনা পারভীন সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি ‘শিলালিপি’র অর্থ ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেন এবং তাদের অর্থ, ওষুধ, খাবার ও কাপড় সরবরাহ করেন।
১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর, স্বাধীনতা যুদ্ধের অবসানের তিন দিন আগে, আল-বদর বাহিনী তাঁকে ঢাকার নিউ সার্কুলার রোডের (বর্তমান ২৯ নং শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক) বাসা থেকে অপহরণ করে। ১৪ ডিসেম্বর তাকে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাঁর মৃতদেহ পরে সেখানেই উদ্ধার করা হয়। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশের সাহিত্য ও সাংবাদিকতা জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়। তার স্মৃতি ধরে রাখতে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ তাঁর নামে ডাকটিকেট প্রকাশ করেছে এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ঢাকার একটি সড়কের নামকরণ করেছে ‘শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক’।
সেলিনা পারভীনের জীবনী এক অসাধারণ উদাহরণ, একজন নারীর সাহস, সৃজনশীলতা ও দেশপ্রেমের। তাঁর অবদান আজও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।