পানামা ফারুক: বরিশালের এক ভয়ঙ্কর নাম
বরিশাল নগরীর নামের সাথে ‘পানামা ফারুক’ নামটি একসময় অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে ছিল। ফারুক আহম্মেদ নামে পরিচিত এই ব্যক্তি রাজনৈতিক প্রভাব ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বরিশালে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিলেন। তার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ঘটনা, তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং তার মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে আজও বরিশালের মানুষের মনে রয়েছে।
প্রাথমিক জীবন ও রাজনৈতিক জীবন:
জানা যায়, ১৯৯৩ সাল থেকে ফারুক আহম্মেদ রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। প্রথমদিকে ছাত্রদলের সাথে যুক্ত হলেও পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যুবলীগের সাথে জড়িত হন। স্থানীয়দের মতে, তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অনুসারী ছিলেন। ‘পানামা ফারুক’ নামটি তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘পানামা ট্রেডার্স’ থেকে এসেছে।
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ‘আট খলিফা’:
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত, পানামা ফারুক বরিশালে ‘আট খলিফা’ নামে পরিচিত একটি সন্ত্রাসী দলের নেতৃত্ব দেন। এই দলটি চাঁদাবাজি, হত্যা, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং অন্যান্য অপরাধে জড়িত ছিল। তাদের কর্মকাণ্ডের ফলে বরিশালে একটি আতঙ্কের রাজত্ব স্থাপিত হয়। এই সময় বরিশাল প্রেস ক্লাবের উপরও হামলা চালানো হয়। তিনি একে-৪৭ রাইফেল নিয়ে নগরীতে প্রকাশ্যে মহড়াও দিতেন বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল।
আত্মগোপন ও আদালতে আত্মসমর্পণ:
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর পানামা ফারুকসহ অন্যান্য সন্ত্রাসীরা ভারতে পালিয়ে যান। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসলেও তাকে সক্রিয় থাকতে দেখা যায়নি। তবে ২০১৩ সালের দিকে তিনি আবারো আলোচনায় আসেন। ২০০৯ সালের ৪ অক্টোবর তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এবং কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত হন।
মৃত্যু:
২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বরিশাল নগরের চকবাজার এলাকায় র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন ফারুক আহম্মেদ। র্যাবের দাবি ছিল বন্দুকযুদ্ধে তার মৃত্যু, কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে এই দাবি নাকচ করা হয়। ঘটনার পর তার নাম আবারো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে।
তাহসানের শ্বশুর:
সম্প্রতি জনপ্রিয় গায়ক-অভিনেতা তাহসান খানের বিয়ের খবর প্রকাশের পর আবারও পানামা ফারুকের নাম আলোচনায় আসে। কারণ, তাহসানের স্ত্রী রোজা আহমেদের পিতা হলেন পানামা ফারুক। এই ঘটনা ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে।
উপসংহার:
পানামা ফারুকের জীবন বিতর্কিত এবং জটিল। তার রাজনৈতিক সংযোগ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং মৃত্যুর ঘটনা বরিশালের রাজনীতি ও সমাজে একটি গভীর ছাপ রেখে গেছে। তার মৃত্যুর পর ও তার মেয়ের সাথে তাহসানের বিবাহের পর আবারো তার নাম আলোচনায় চলে আসে।