পশ্চিমভাগ গ্রাম: একটি ঐতিহাসিক তাম্রশাসনের আধার
মৌলভীবাজারের পশ্চিমভাগ গ্রাম, বর্তমানে রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নে অবস্থিত, বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ স্থান। এর তাৎপর্য লুকিয়ে আছে ১৯৫৮ সালে এখান থেকে আবিষ্কৃত একটি তাম্রশাসনে, যা 'পশ্চিমভাগ তাম্রশাসন' নামে পরিচিত। এই তাম্রশাসনটি দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার চন্দ্রবংশীয় রাজা শ্রীচন্দ্রের রাজত্বকালের (৯৩০-৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ) একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
পশ্চিমভাগ তাম্রশাসনের তথ্য:
- আবিষ্কার: ১৯৫৮ সালে স্থানীয় একজন, পরেশ পাল নামক ব্যক্তি, পুকুর খননের সময় এই তাম্রশাসন আবিষ্কার করেন।
- লিপি: তাম্রশাসনটি সংস্কৃত ভাষায় উত্তরবঙ্গীয় নাগরী লিপিতে লেখা।
- বিষয়বস্তু: এটি মূলত একটি দানপত্র, যেখানে রাজা শ্রীচন্দ্র প্রায় ছয় হাজার ব্রাহ্মণকে ভূমি অনুদান দান করেন। এছাড়াও এতে চন্দ্রবংশীয় রাজত্ব, পাল ও কম্বোজ সাম্রাজ্যের ইতিহাস এবং তৎকালীন সমাজের বিভিন্ন দিকের বর্ণনা পাওয়া যায়।
- চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়: তাম্রশাসনের তথ্য থেকে ধারণা করা হয়, রাজা শ্রীচন্দ্র নয়টি মঠের সমন্বয়ে 'চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও প্রাচীন বলে অনুমান করা হয়।
- অবস্থান: পশ্চিমভাগ গ্রাম, মৌলভীবাজার, বাংলাদেশ।
- গুরুত্ব: এই তাম্রশাসন বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাস, রাজনীতি, সমাজ ব্যবস্থা এবং শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
পশ্চিমভাগ গ্রামের অন্যান্য তথ্য:
- পশ্চিমভাগ গ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক কার্যকলাপ ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
- তাম্রশাসন আবিষ্কারের পর পশ্চিমভাগ গ্রাম ঐতিহাসিক গবেষণার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
- এখানে আরও ঐতিহাসিক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে পশ্চিমভাগ গ্রাম ও তার আশেপাশের অঞ্চলের সম্পূর্ণ ইতিহাস উন্মোচন করার জন্য।
উপসংহার:
পশ্চিমভাগ গ্রামের নাম ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমভাগ তাম্রশাসনের সাথে জড়িত। এই তাম্রশাসন বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের একটি মূল্যবান দলিল। ভবিষ্যতে আরও গবেষণার মাধ্যমে পশ্চিমভাগ গ্রামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য উন্মোচিত হবে বলে আশা করা যায়।