অবকাঠামো: একটি জাতির ভিত্তি
একটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য অবকাঠামো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবকাঠামো বলতে শুধুমাত্র রাস্তাঘাট, সেতু, রেলপথ, বিদ্যুৎ, পানি, এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকেই বুঝায় না, এটি একটি জটিল ও আন্তঃসংযুক্ত ব্যবস্থা যা একটি জাতির সমগ্র কার্যক্রমকে সমর্থন করে। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে শক্ত অবকাঠামো (যেমন রাস্তা, সেতু, বন্দর) এবং নরম অবকাঠামো (যেমন শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, শাসন ব্যবস্থা)।
- *ঐতিহাসিক দিক:** ১৯৪০ সালে ন্যাটো গঠনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক ক্ষেত্রে অবকাঠামোর ধারণা প্রথম প্রয়োগ করা হয়। পরবর্তীতে, ১৯৭০ সালে শহুরে পরিকল্পকরা এটিকে আধুনিক বেসামরিক উন্নয়নে গ্রহণ করে। ১৯৮৭ সালে মার্কিন জাতীয় গবেষণা পরিষদ 'গণপূর্ত পরিকাঠামো'-র একটি বিস্তারিত সংজ্ঞা প্রদান করে।
- *বিভিন্ন ধরণের অবকাঠামো:** শক্ত অবকাঠামো ছাড়াও রয়েছে নরম অবকাঠামো, সংকটপূর্ণ অবকাঠামো (যা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়), সবুজ অবকাঠামো (প্রকৃতির সাথে সমন্বয়), এবং যোগাযোগ অবকাঠামো। মার্ক্সবাদে, অবকাঠামোকে দ্বন্দ্ববাদের ভিত্তি হিসেবে দেখা হয়।
- *অর্থনৈতিক দিক:** OECD যোগাযোগকে অবকাঠামোর অংশ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে। আমেরিকান 'পরিকাঠামো প্রতিবেদন পত্র' বিভিন্ন খাতের অবকাঠামোর অবস্থা মূল্যায়ন করে। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে অবকাঠামোর অভাব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম বৃহৎ বাধা। এশিয়া, লাতিন আমেরিকা এবং আফ্রিকায় অবকাঠামোতে বিনিয়োগের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। বিভিন্ন উৎস থেকে (সরকার, বেসরকারী খাত, বিদেশী সাহায্য) অর্থায়ন করা হয়। চীন আফ্রিকার অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
- *উদাহরণ:** রাস্তা, সেতু, রেলপথ, বিমানবন্দর, বন্দর, বিদ্যুৎ গ্রিড, পানি সরবরাহ, টেলিযোগাযোগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান।
- *উপসংহার:** অবকাঠামো একটি জাতির অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের মূল ভিত্তি। এর সুষ্ঠু উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ একটি দেশের সামগ্রিক প্রগতির জন্য অপরিহার্য।