নোয়াখালী সদর উপজেলা, বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা, যা মাইজদী নামেও অধিক পরিচিত। এর আদি নাম ছিল সুধারাম। ১৮৬১ সালে সুধারাম মজুমদার নামে এক জনহিতৈষী ব্যবসায়ীর নামানুসারে সুধারাম থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ সালে মেঘনার গর্ভে উপজেলা সদরদপ্তর বিলীন হয়ে যাওয়ার পর ৮ কিলোমিটার উত্তরে বর্তমান মাইজদীতে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৮৩ সালে সুধারাম থানাকে নোয়াখালী সদর থানা হিসেবে নামকরণ করা হয়, যা বর্তমানের নোয়াখালী সদর উপজেলা।
২২°৩৮´ থেকে ২২°৫৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৪´ থেকে ৯১°১৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে এর অবস্থান। উত্তরে বেগমগঞ্জ, দক্ষিণে সুবর্ণচর, পূর্বে কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জ, এবং পশ্চিমে লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা অবস্থিত।
১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল পাকবাহিনী এ উপজেলায় প্রবেশ করে। ১৮ জুন সোনাপুরের শ্রীপুর গ্রামে ৭০ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে পাকসেনারা হত্যা করে। ৭ ডিসেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকার বহু লোক প্রাণ হারিয়েছিল।
এখানে ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম সুধারাম মডেল থানার আওতাধীন। ২০০১ সালের আদমশুমারী অনুসারে জনসংখ্যা ছিল ৩,৩১,৪৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১,৬৪,১০৯ জন এবং মহিলা ১,৬৭,৩৮৪ জন। ধর্মীয়ভাবে এখানে ৩,২৩,৬৬১ জন মুসলিম, ৭,৩০১ জন হিন্দু, ৫১৫ জন বৌদ্ধ এবং ১৬ জন অন্যান্য ধর্মের অনুসারী বাস করেন।
এর সব ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন; তবে ১৮.৬১% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ আছে। পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৬৯.৩২%, ট্যাপ ১০.২০%, পুকুর ১৫.০৩% এবং অন্যান্য ৫.৪৫%। অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি আছে। ৩৩.৪১% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫৩.২১% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৩.৩৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই। শিক্ষার হার ৫৯.৯০% (পুরুষ ৬২.৭৯%, মহিলা ৫৭%)।
উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে নোয়াখালী সরকারি কলেজ (১৯৬৩), ব্রাদার আন্দ্রে উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৫৭), আহমদিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৬), অরুণচন্দ্র আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৪), পৌরকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪০), নোয়াখালী জিলা স্কুল (১৮৫৩), ওবায়েদ উল্লাহ্ মেমোরিয়াল হাই স্কুল (১৯৭১), এবং আরও অনেক মাদ্রাসা। প্রধান কৃষি ফসল ধান, আখ, ডাল, চীনাবাদাম, সয়াবিন, শাকসবজি। বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, পাট। প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, নারিকেল, পেঁপে, সুপারি। জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি, অকৃষি শ্রমিক, শিল্প, ব্যবসা, পরিবহন, চাকরি, নির্মাণ, ধর্মীয় সেবা, এবং অন্যান্য। প্রধান রপ্তানিদ্রব্য নারিকেল, সুপারি, ধান, মাদুর, শুটকিমাছ। পাকারাস্তা ১৯৪ কিমি; নৌপথ ৩০ নটিক্যাল মাইল; রেলপথ ১০ কিমি। রেলস্টেশন ৪। বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি, মহিষের গাড়ি।