নেওয়াজ

নেওয়াজ নামে পরিচিত কাজী কাদের (১৯০৯-১৯৮৩) ছিলেন একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কবি। ১৯০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি মুর্শিদাবাদের তালেবপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পৈতৃক নিবাস ছিল পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট গ্রামে। বর্ধমানের মাথরুন উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স (১৯২৩), বহরম কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ (১৯২৯) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৩২ সালে বিটি পাস করে সাব-ইন্সপেক্টর অব স্কুল হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ১৯৪৬ সালে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পান। দেশভাগের পর ঢাকায় চলে আসেন এবং নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও দিনাজপুর জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন (১৯৫১)। ১৯৬৬ সালে অবসর গ্রহণ করেন এবং মাগুরার মুজদিয়া গ্রামে বসবাস করেন। একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে তিনি সকলের শ্রদ্ধা অর্জন করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য-সহযোগিতা করেন। সাহিত্যচর্চায় তিনি অল্প বয়স থেকেই আগ্রহী ছিলেন। বিকাশ, শিশুসাথী, ভারতবর্ষ, বসুমতী, শুকতারা, পাঠশালা, রামধনু, শীশমহল, মৌচাক, প্রবাসী, সওগাত প্রভৃতি পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হয়। কবিতাই ছিল তার প্রধান চর্চা ক্ষেত্র। তিনি ছান্দসিক কবি হিসেবে অধিক পরিচিত ছিলেন। প্রেম, প্রকৃতি ও স্বদেশ তাঁর কবিতার প্রধান বিষয়বস্তু। তার সহজ-সরল ভাবমাধুর্যে রচিত কাহিনীধর্মী ও নীতিকথামূলক শিশুতোষ রচনাও বেশ জনপ্রিয়। দেশ বিভাগের পর পূর্ববঙ্গের সাহিত্যচর্চার ধারাকে স্বতন্ত্র মর্যাদায় সুসংগঠিত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে তার অবদান উল্লেখযোগ্য। নেওয়াজের উল্লেখযোগ্য রচনাবলীর মধ্যে রয়েছে: মরাল (১৯৩৬), দাদুর বৈঠক (১৯৪৭), নীল কুমুদী (১৯৬০), মণিদীপ, কালের হাওয়া, মরুচন্দ্রিকা, দুটি পাখি দুটি তারা (১৯৬৬), উতলা সন্ধ্যা ইত্যাদি। তিনি প্রেসিডেন্ট পুরস্কার, শিশুসাহিত্যের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৩) এবং মাদার বক্শ পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৩ সালের ৩ জানুয়ারি স্বগ্রামে তার মৃত্যু হয়।