নিরাপদ খাদ্য: একটি জাতীয় উদ্বেগ
আধুনিক জীবনে খাদ্য নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দ্রুত শিল্পায়নের ফলে উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিতরণের বিভিন্ন পর্যায়ে খাদ্য দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে। এই দূষণের ফলে খাদ্যবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য এক বিরাট হুমকি।
খাদ্য দূষণের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক, কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ, ভারী ধাতু, রাসায়নিক দ্রব্যাদি ইত্যাদি। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি, অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবিধি, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদিও এতে ভূমিকা পালন করে।
২০০৫ সালে উদরাময় রোগে বিশ্বে ১.৮ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে পরিসংখ্যান বলছে। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ৭৬ মিলিয়ন মানুষ খাদ্যবাহিত রোগে আক্রান্ত হয় এবং ৫০০০ এর উপর মৃত্যু ঘটে। চীনে ১৯৮৮ সালে দূষিত শামুক খাওয়ার ফলে প্রায় ৩ লাখ মানুষ রোগাক্রান্ত হয়েছিল। ২০০৮ সালে চীন থেকে আমদানি করা দূষিত গুঁড়াদুধের ঘটনা বাংলাদেশেও ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল।
বাংলাদেশেও খাদ্যবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব উদ্বেগজনক। বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ-১৯৫৯, বিএসটিআই অধ্যাদেশ-১৯৮৫ ইত্যাদি আইন থাকা সত্ত্বেও, এই সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়নি। সরকার ২০০৮ সালে নিরাপদ খাদ্য সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে, যার মাধ্যমে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদনকারী, প্রক্রিয়াকারক, বিতরণকারী ও ভোক্তাদের সকলেরই দায়িত্বশীলতা বেড়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, আইন প্রয়োগের কঠোরতা বৃদ্ধি এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এ সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এর নির্দেশনা অনুসরণ করে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা উন্নত করা প্রয়োজন।