নিয়োগ: প্রাচীন রীতি থেকে আধুনিক কর্মসংস্থান
প্রাচীন ভারতীয় রীতি ‘নিয়োগ’ (সংস্কৃত: नियोग) শব্দটির অর্থ মিলনহীন। ‘নি’ অর্থ হীন বা ছাড়া এবং ‘যোগ’ অর্থ মিলন। এই রীতিতে, সন্তানহীনা স্ত্রী একজন ধার্মিক ব্যক্তির কাছে সন্তান লাভের আশায় আশীর্বাদ কামনা করতেন। মহাভারতের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল সত্যবতী তার পুত্র বেদব্যাসকে বিচিত্রবীর্যের দুই বিধবার সাথে নিয়োগের অনুরোধ করা। ফলে অম্বিকা, অম্বালিকা ও এক দাসীর যথাক্রমে ধৃতরাষ্ট্র, পান্ডু ও বিদুরের জন্ম হয়। মনুসংহিতায়ও নিয়োগের উল্লেখ আছে, যেখানে এই রীতির ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হলেও শারীরিক মিলনের বর্ণনা নেই। কুন্তীও ঋষি দুর্বাসার বরের মাধ্যমে দেবতাদের আহ্বান করে কর্ণ, যুধিষ্ঠির, ভীম ও অর্জুন লাভ করেন, এবং মাদ্রীকে নকুল ও সহদেব লাভ করিয়ে দেন। অনেকের মতে, এই রীতিতে শারীরিক সম্পর্ক ঘটত না, অন্যরা একে শারীরিক সম্পর্কহীন বীর্যদানের সাথে তুলনা করেন। মুনি-ঋষিদের প্রচ্ছন্ন ভাষা ও তাদের বক্তব্যের গভীর অর্থ খোঁজার কারণে ‘নিয়োগ’-এর সঠিক ব্যাখ্যা এখনও বিতর্কিত।
আধুনিক যুগে ‘নিয়োগ’ শব্দটির ব্যবহার পরিবর্তিত হয়েছে। বাংলাদেশে সরকারি চাকুরি নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮১, বিভিন্ন সরকারি চাকুরিতে নিয়োগের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে। সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ কর্মকমিশনের সাথে পরামর্শ করে এই বিধিমালা অনুমোদন করেন। ১৯৮১ সালের ১ জানুয়ারি প্রকাশিত এই বিধিমালায় বিভিন্ন সংশোধনী আনা হয়েছে। সংবিধানের ২৯ (১) অনুচ্ছেদ সকল নাগরিকের চাকুরিতে সমান সুযোগ নিশ্চিত করে এবং ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ইত্যাদির ভিত্তিতে বৈষম্য নিষিদ্ধ করে। তবে অনগ্রসর গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য, কিছু ব্যতিক্রমী বিধান রাখা হয়েছে। বিধিমালায় সরাসরি মনোনয়ন এবং পদোন্নতি দুই ধরণের নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। সরাসরি নিয়োগের যোগ্যতা, প্রাক-কার্যক্রম তদন্ত, আবেদনের নিয়ম ইত্যাদি বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের সুপারিশ গুরুত্বপূর্ণ। মেধা, জেলা কোটা, মুক্তিযোদ্ধা, মহিলা ও উপজাতীয় কোটা সংরক্ষণের বিধানও রয়েছে। চাকুরি নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষানবিশ কাল, নিয়মিতকরণের শর্ত, প্রেষণের নিয়ম ইত্যাদি বিষয়ও এই বিধিমালায় বর্ণিত।