নিউ ইয়র্ক সিটি, যার সরকারি নাম ‘সিটি অফ নিউ ইয়র্ক’ এবং প্রচলিত নাম ‘নিউ ইয়র্ক সিটি’, উত্তর-পূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বন্দর নগর। হাডসন ও ইস্ট নদীর মোহনায়, আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে অবস্থিত এই শহরটি উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বৃহৎ ও প্রভাবশালী মহানগরী। ম্যানহাটন, স্ট্যাটেন আইল্যান্ড, লং আইল্যান্ডের অংশ এবং নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের মূল ভূখণ্ডের একটা অংশ নিয়ে নিউ ইয়র্ক সিটি গঠিত। শহরটিকে পাঁচটি প্রশাসনিক অঞ্চল বা ‘বরো’তে বিভক্ত করা হয়েছে: ম্যানহাটন, ব্রুকলিন, দ্য ব্রংক্স, কুইন্স এবং স্ট্যাটেন আইল্যান্ড। নিউ ইয়র্কের আবহাওয়া আর্দ্র উপক্রান্তীয়। গড় তাপমাত্রা জানুয়ারিতে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে এবং জুলাই-আগস্টে ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে।
মূল শহরের আয়তন ৩০২.৬ বর্গ মাইল (৭৮৪ কিমি²)। প্রায় ৮৬ লক্ষ লোক এখানে বাস করে। নিউ ইয়র্কাররা বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আগত অভিবাসী সম্প্রদায় নিয়ে গঠিত। শহরের প্রায় ৩৬% বাসিন্দা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেনি। এখানে ৮০০ এরও বেশি ভাষা প্রচলিত। নিউ ইয়র্ক বাণিজ্য, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও শিক্ষার একটি বিশ্ব-কেন্দ্র। জাতিসংঘের সদর দপ্তর এখানেই অবস্থিত। এরিক অ্যাডামস বর্তমান মেয়র।
ওয়াল স্ট্রিট, ব্রডওয়ে, ফিফথ অ্যাভিনিউ, ম্যাডিসন অ্যাভিনিউ, গ্রিনিচ ভিলেজ, সেভেনথ অ্যাভিনিউ, ট্যামানি হল, হারলেম – প্রত্যেকটি স্থান নিউ ইয়র্কের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৮৮৬ সালে স্থাপিত স্ট্যাচু অফ লিবার্টি শহরের আইকনিক প্রতীক। ম্যানহাটনের দক্ষিণ প্রান্তে লোয়ার ম্যানহাটনের আকাশচুম্বী ভবনগুলি নিউ ইয়র্কের ঐশ্বর্যের প্রতীক। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংস হয়ে যায়। বর্তমানে ঐ স্থানে ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার দাঁড়িয়ে আছে।
সেন্ট্রাল পার্ক, টাইমস স্কোয়ার, মেট্রোপলিটান মিউজিয়াম অফ আর্ট, গুগেনহাইম মিউজিয়াম, মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্ট, রকফেলার সেন্টার, গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল রেল স্টেশন, সোহো এলাকা, আমেরিকান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্টরি, ফ্ল্যাট আয়রন বিল্ডিং, রেডিও সিটি মিউজিক হল, ব্রংক্স জু – এই স্থানগুলি নিউ ইয়র্কের দর্শনীয় স্থান। বাস্কেটবল, মার্কিন ফুটবল, বরফ হকি, বেসবল ও টেনিসের জনপ্রিয়তা নিউ ইয়র্কে অসাধারণ।
শহরে ১১০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ রয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম সরকারি বিদ্যালয় ব্যবস্থা এবং বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গ্রন্থাগার নিউ ইয়র্কে অবস্থিত। নিউ ইয়র্ক সিটি সাবওয়ে বিশ্বের বৃহত্তম দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা। ব্রুকলিন ব্রিজ, হল্যান্ড টানেল, জর্জ ওয়াশিংটন ব্রিজ এবং ভেরাজানো-ন্যারোস ব্রিজ শহরের ঐতিহাসিক ও প্রকৌশলগত গৌরবের সাক্ষী। জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উত্তর আমেরিকার ব্যস্ততম বিমানবন্দর। নিউ ইয়র্ক সমুদ্রবন্দর বিশ্বের প্রধান বন্দরগুলির একটি।
ওলন্দাজরা ১৬২৪ সালে ‘নতুন আমস্টারডাম’ প্রতিষ্ঠা করে। ১৬৬৪ সালে ইংরেজরা এটি দখল করে ‘নিউ ইয়র্ক’ নামকরণ করে। ১৭৮৫ থেকে ১৭৯০ সাল পর্যন্ত ৬ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ছিল নিউ ইয়র্ক। ১৯ শতকের শেষভাগ ও ২০ শতকের শুরুতে লাখ লাখ অভিবাসী নিউ ইয়র্ক বন্দর দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে। আজ নিউ ইয়র্ক উদ্ভাবন, শিল্পোদ্যোগ, সামাজিক সহনশীলতা, টেকসই পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য বিশ্বে একটি শীর্ষস্থানীয় শহর। ১৫২৪ সালে ইতালীয় অভিযাত্রী জোভান্নি দা ভেরাৎসানো প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে বর্তমান নিউ ইয়র্ক অঞ্চল আবিষ্কার করেন।